ইসলাম ৫ টি স্তম্ভের ওপর নির্মিত। এই ৫ টি স্তম্ভের মধ্যে প্রধান এবং অন্যতম স্তম্ভ হলো নামাজ। মহান আল্লাহ তায়ালা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সকল সুস্থ সবল মুসলিমদের জন্য ফরজ করে দিয়েছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হলো ফজর , যোহর ,আসর ,মাগরিব,ঈশা।
ইশার নামাজে শেষে বিতর নামাজ পড়তে হয়। বিতর নামাজ পড়া ওয়াজিব। বিতর আরবি শব্দ। বিতর শব্দের অর্থ হলো বিজোড়।
বিতর নামাজে রাকাত সংখ্যা
ইমাম আজম হযরত আবু হানিফা (রহঃ) বলেছেন, বিতর নামায তিন রাকআত। ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) ও অন্যান্য ইমামগণের মতে তা এক রাকআত। আসলে মহানবী (সঃ) তাহাজ্জুদের নামায সর্বদা জোড় অর্থাৎ দুই রাকআত, চার রাকআত, আট রাকআত করে আদায় করেছেন।
। অতঃপর তিন রাকআত আবার কখনও এক রাকআত দ্বারা তাকে বিতর অর্থাৎ বিজোড় করেছেন। সুতরাং সাহাবীদের মধ্যে যিনি যা দেখেছেন তিনি তাই বর্ণনা করেছেন। আমাদের মাযহাবে বিতর নামায তিন রাকআত।
বিতর নামাজের সময়
বিতর নামাজের সময় হলো ইশার নামাজের পরে থেকে সুবহে সাদিকের আগে পর্যন্ত। তবে শেষ রাট অর্থাৎ ফজরে নামাজের পূর্বে বিতরের নামাজ আদায় করা উত্তম।
যারা শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে জেগে থাকে তারা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে বিতর নামাজ আদায় করবে। হজরত মুহাম্মদ (সা) এই নিয়মে নামাজ আদায় করতে করতেন। এই সময়ের নামাজের অনেক ফজিলত।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এই সময় প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার সকল চাওয়া পাওয়া পুরুন করেন।
আর যাদের শেষ রাতে ঘুম থেকে জাগার অভ্যাস নেই বা অসুস্থতাত কারণে জগতে অসুবিধা হয় তারা ইশার নামাজ আদায় করে বিতর নামাজ পড়তে পারেন।
রমজান মাসে তারাবীহ নামাজ আদায় করে ,লাইলাতুল কদরের রাতে এবং লাইলাতুল বরাতের রাতে নফল নামাজ আদায় করে বিতর নামাজ আদায় করতে হবে।
বিতর নামাজের নিয়ত
আরবি উচ্চারণ :
تويت أن أصلى لله تعالى تلك ركعات صلوة الوتر واحب الله تعالى متوجها إلى جهة الكعبة الشريفـة الله اكبر
বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উছালিয়া লিল্লাহি তা’আলা ছালাছা রাকআ তি সালাতিল বিতরি ওয়াজিবুল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ: আমি কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর জন্য বিতরের তিন রাকয়াত ওয়াজিব নামায আদায় করিবার নিয়ত করিলাম, আল্লাহু আকবার ।
৩ রাকাত বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
১। ওযু করে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে জায়নামাজের দোয়া পড়তে হবে।
২। মনে মনে নিয়ত করে তাকবরে তাহরীমা পরে মেয়েরা বুকে ও ছেলেরা নাভির ওপরে হাত বাধবে।
৩। সানা পরবে।
৪। বিসমিল্লাহ সহ সূরা ফাতিহা পাঠ করে অন্য যেকোনো সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।
৫। রুকু ও সিজদা করে উঠে দাঁড়িয়ে পূর্বের ন্যায় হাত বাঁধতে হবে।
৬। সূরা ফাতিহা এবং অন্য সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।
৭। পূর্বের ন্যায় রুকু ও সিজদা করে সোজা হয়ে না দারিয়ে বসে থেকে তাশাহুদ পাঠ করতে হবে। এভাবে প্রথম বৈঠক শেষ করতে হবে।
৮। আল্লাহু একবার বলে দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।
৯। তৃতীয় রাকাতে রুকু ও সিজদা যাওয়ার আগে পুনরায় একটি তাকবীর দিয়ে হাত বাধবে এবং দোয়া কুনুত পাঠ করবে।
১০। তারপর রুকু ও সিজদা করে না দাঁড়িয়ে তাশাহুদ ,দরূদ শরীফ ,দোয়া মাসুরা পাঠ করতে হবে। তারপর ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
বিতর নামাজের দোয়া কুনুত
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈ নুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া নু’ মিনু বিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইকা, ওয়া নুসনী আ’লাইকাল খাইর। ওয়া নাকুরুকা ওয়ালা নাফুরুকা ওয়া নাখলাউ’ ওয়া নারুকু মাই ইয়ারুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকা নুসাল্লী ওয়া নাজ্জুদু ওয়া ইলাইকা নাসআ ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখা-আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিকুফ্ফারি মুলহিক।
অর্থ : হে আল্লাহ্ ! আমরা তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং ক্ষমা ভিক্ষা করছি। এবং তোমার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করছি আর তোমারই উপর ভরসা করছি, তোমারই উত্তম উত্তম গুণগান করছি এবং তোমারই শোকর আদায় করছি, (কখনও) তোমার নাশোকরী বা কুফরী করব না, যারা তোমার অবাধ্য হবে তাদেরকে আমরা পরিত্যাগ করে চলব। হে আল্লাহ্! আমরা একমাত্র তোমারই দাসত্ব করছি, একমাত্র তোমার উদ্দেশেই নামায আদায় করছি, একমাত্র তোমাকেই সেজদা করছি এবং একমাত্র তোমার নির্দেশ পালন ও তাবেদারীর জন্য সর্বদা প্রস্তুত আছি। সর্বদা তোমার রহমতের আশা এবং আযাবের ভয় হৃদয়ে পোষণ করিছে। যদিও তোমার আসল আযাব তা কেবলমাত্র নাফরমানদের উপরই হবে। তবুও আমরা সে আযাবের ভয়ে কল্পমান থাকি ।
দোয়া কুনুত না জানলে করণীয়
অনেকেই দোয়া কুনুত মুখস্থ করতে পারেন না বা জানা নেই তারা বিতর নামাজের তৃতীয় রাকাতে কোন দোয়া পড়বেন তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পরে যান।তারা কুরআনের যেসব আয়াতে দোয়া আছে সে আয়াত পড়তে পারেন।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দোয়া কুনুত মুখস্থ করে নেওয়া চাই। কারণ, এটা পড়া রাসুল (সা.)-এর সুন্নত। তবে দোয়া মুখস্ত করার আগ পর্যন্ত আপাতত পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এই দোয়া গুলো পড়া যাবে।
কুরআনের দোয়া
১। আরবি উচ্চারণ :
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا حَسَنَةً وَّ فِی الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ
বাংলা উচ্চারণ:
রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আখিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া কিনা আজাবান নার।
অর্থ:হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন; আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন। এবং আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২০১)
২। আরবি উচ্চারণ :
أَللّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মাগ ফির লানা।
অর্থ : হে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
৩। আরবি উচ্চারণ:
أَسْتَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহ।
অর্থ :হে আল্লহ, আমাকে ক্ষমা করুন।
অনেকেই দোয়া কুনুতের পরিবর্তে সূরা ইখলাস ৩ বার পাঠ করে থাকে এটা পড়া গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সূরা ইখলাস দোয়া কুনুত সম্বলিত কোনো দোয়া নয়। দোয়া কুনুতের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দোয়া ব্যতীত অন্য দোয়া পড়লে ওয়াজিব আদায় হবে। কিন্তু দোয়া কুনুত জোট তাড়াতাড়ি সম্ভব মুখস্থ করে নিতে হবে।
সতর্কতা
তৃতীয় রাকাআতে দোয়া কুনুত না পড়ে সিজদায় চলে গেলে নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ে সাহু সিজদা করলেই চলবে। আবার ভুলে প্রথম বা দ্বিতীয় রাকাআতে দোয়া কুনুত পড়ে ফেললেও সাহু সিজদা দিতে হবে। সুতরাং বিতরের নামাজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
বিতর নামাজ পড়ার ফজিলত
বিতরের নামাজ পড়ার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ তাগিদ দিয়ে বলেন, বিতরের নামাজ পড়া আবশ্যক। যে ব্যক্তি বিতর আদায় করবে না, আমাদের জামাআতের সাথে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। (আবু দাউদ)
খারেজা ইবনে হুযাফা (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আমাদের নিকট এসে বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তােমাদেরকে একটি নামাজ দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন। উহা তোমাদের জন্য লাল উটের চেয়ে উত্তম। তা হচ্ছে ‘বিতর নামায। এ নামায আদায় করার জন্য তিনি সময় নির্ধারণ করেছেন, এশার নামাজের পর থেকে ফজর উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।(আবু দাউদ হাদিস নং: ১২০৮,তিরমিযী হাদিস নং: ৪১৪ ,ইবনে মাজাহ হাদিস নং: ১১৫৮)