বারো চান্দের ফজিলত | Baro Chander Fajilat

১ বছর সমান ৩৬৫ দিন । ৩৬৫ দিনকে ১২ মাসে ভাগ করা হয়েছে ।বাংলা এবং ইংরেজিতে এ বার মাসের নাম আলাদা আলাদা ভাবে দেয়া হয়েছে তেমনি আরবিতে ও এ বার মাসের নাম আলাদা আলাদা ভাবে দেয়া হয়েছে । আরবিতে এ বার মাসকে বার চাঁদ বলা হয় ।এ বার তি চাঁদের অনেক ফজিলত রয়েছে ।যা আমাদের অনেকের অজানা ।

আজকে এ বার চাঁদের নাম এবং ফজিলত সম্পর্কে আলচনা করব ।আশা করি আপনারা এখান থেকে অনেক কিছু জানতে পারবেন ।

আরবিতে ১২ মাসের নামগুলো হল

১ । মুহররম মাস
২ । সফর মাস
৩ । রবিউল আউয়াল মাস
৪ ।রবিউচ্ছানি মাস
৫ । জমাদিউল আউয়াল মাস
৬ । জমাদিউচ্ছানি মাস
৭ । রজব মাস
৮ । শাবান মাস
৯ । রমজান মাস
১০ । শাওয়াল মাস
১১ । জিলকদ মাস
১২ । জিলহাজ্জ মাস

১২ মাসের ফজিলত হল

১ । মুহররম মাস

হজরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত , যে ব্যক্তি মুহররম মাসের প্রথম রাতে প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার এক বার এবং সুরা ইখলাস ১০ বার পাঠ করে
নামাজ আদায় করে । এভাবে মোট ৮ রাকাত নফল নামাজ আদায় করে তাহলে কেয়ামতের দিন হজরত মুহাম্মাদ (সা) তার এবং তার পরিবারের
সবার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা কাছে সুপারিশ করবে ।

এই মহররম মাসের ১০ তারিখ আশুরা নামে পরিচিত । আশুরার অনেক সওয়াব রয়েছে ।হজরত মুহাম্মাদ(সা) আশুরার দিন রোজা রাখতেন ।
আমাদের উচিত মহানবি হজরত মুহাম্মাদ(সা) এর পথ অনুসরণ করা । তাহলে আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা হতে পারব । কারণ
মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) যে কাজ গুলো করতেন সব কাজকে মহান আল্লাহ তায়ালা সুন্নত ঘোষণা করেছেন ।

তাই মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) এর দেখানো পথ অনুসরণ করলে অনেক সওয়াব লাভ করা যাবে এবং মহান আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা
হতে পারব ।

মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন , যে ব্যক্তি আশুরার দিন রোজা রাখবে তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালা ঐ ব্যক্তিকে দশ হাজার শাহাদাতের
সওয়াব দান করবে এবং দশ হাজার হজ্জের সওয়াব দান করবে ।

২ । সফর মাস

সফর মাসের প্রথম তারিখে মাগরিব নামাজ পরে এবং এশার নামাজের আগে সুরা ফাতিহা এক বার এবং সুরা ইখলাস এগারো বার পাঠ করে মোট চার রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নিম্নের দরুদ শরিফ পাঠ করে তাহলে তার সমস্ত ছগিরা গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় । সপ্নে হজরত মুহাম্মাদ (সা) এর জিয়ারত করার নছিব হয় ।

দরুদ শরিফতি হল 

বাংলা উচ্চারনঃ
“আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা সায়্যিদিনা মোহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া হাবিবি কান্নাবিয়িল উম্মিয়্যি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লিম” ।

সফর মাসের শেষ বুধবার কে” আখেরি চাহার শোমবাহ ” বলা হয় ।এই তারিখে রোজা রেখে নফল ইবাদত করলে অনেক সওয়াব লাভ করা যায় ।

৩ । রবিউল আউয়াল মাস

রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে আমাদের প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) জন্ম গ্রহন এবং মৃত্যু বরন উভয়ই করেন । এই রবিউল আউয়াল
মাসের ১২ তারিখকে ” ফাতেহায়ে দোয়াজদহম ” বলা হয় এই মাসের প্রথম রাতে এক বার সুরা ফাতিহা এবং ৩ বার সুরা ইখলাস পাঠ করে ২
রাকাত করে মোট ৬ রাকাত নফল নামায আদায় করে উওরে বর্ণিত দরুদ শরিফ তি ১০০০ বার পাঠ করে ঘুমালে স্বপ্নে হজরত মুহাম্মাদ (সা)
জিয়ারত নছিব হবে ।

এছারা এ মাসের ১৩ ,১৪ ,১৫ তারিখে রোজা রাখলে অনেক সওয়াব হাসিল করা যাবে । এই রোজাকে “আইয়ামে বীজের ” রোজা বলা হয় ।

৪ । রবিউচ্ছানি মাস

এই মাসে প্রথম রাতে সুরা ফাতিহা ১ বার এবং সুরা কাওসার ৩ বার ,দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহা ১ বার এবং সুরা ইখলাস ৩ বার পাঠ করে
২ রাকাত করে মোট ৮ রাকাত নফল নামাজ আদায় করলে অনেক নেকি পাওয়া যায় ।

৫ । জমাদিউল আউয়াল মাস

সাহাবায়ে কেরামগন বলেছেন , এই মাসের প্রথম রাতে ১ বার সুরা ফাতিহা এবং ১ বার সুরা ইখলাস পাঠ করে মোট ১০ রাকাত নফল নামাজ
আদায় করে ৩০ বার দরুদ শরিফ পাঠ করে তাহলে অনেক সওয়াব পাওয়া যাবে ।

৬ । জমাদিউচ্ছানি মাস

হাদিস শরিফে বর্ণনা করা হয়েছে , এই মাসের প্রথম তারিখে হজরত আবু বকর (রা) ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন । অন্য বর্ণনায়
বলা হয়েছে , সাহাবা কেরামগন রজব মাসের আগমনের প্রতিক্ষায় এই মাসের ১০ দিন দিনের বেলায় রোজা রাখতেন এবং রাতে ২০ রাকাত
করে নফল নামাজ আদায় করতেন ।

৭ । রজব মাস

মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন , রজব মাসের একটি নির্দিষ্ট দিন এবং রাত আছে যে রাতে ইবাদাত করলে এবং দিনে রোজা রাখলে একশত বছরের রাতের ইবাদাত এবং একশত বছরের রোজার সমান সওয়াব লাভ করা যায় ।

এই দিনতি হল রজব মাসের ২৭ তারিখ । হজরত মুহাম্মাদ (সা) এই রজব মাসের ২৭ তারিখে মেরাজে গমন করেছিলেন । এ জন্য এই রাতকে শবে মেরাজের রাত বলা হয় ।

৮ । শাবান মাস

এই মাসের ১৫ তারিখের রাতকে শবে বরাতের রাত বলা হয় । এই রাত কে মোবারকের রাত বলা হয় ।

মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন , যে ব্যক্তি এই রাত জেগে ইবাদাত করবে , কুরআন তেলাওয়াত করবে , দোয়া দরুদ ,জিকির এবং ইস্তিগফার ইত্যাদি পাঠ করবে তাহলে তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় ,অনেক সওয়াব লাভ করে এবং তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেয়া হয় ।

মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) অন্য হাদিসে বলেছেন , যে ব্যক্তি শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাতে ইবাদাতের নিয়তে গোসল করবে তাহলে তার প্রতি ফোটা পানির বদলে তার আমল নামায় ৭০০ রাকাত নফল নামাজের সওয়াব লেখা হবে ।

৯ । রমজান মাস

রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি । রমজান মাসে রোজা এবং তারাবীহ নামাজ আদায় করতে হয় । এই মাসের প্রত্যেক এবাদাতের ৭০ গুন বেশি সওয়াব পাওয়া যায় ।

হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন , রমজান মাসের একটি নফল কাজ অন্য মাসের ফরজ কাজের সমান এবং রমজান মাসের একটি ফরজ কাজ অন্য মাসের ১০ টি ফরজ কাজের সমান ।

এই মাসে পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাত রয়েছে ।মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন , লাইলাতুল কদরের রাত হাজার মাস হতে উত্তম । এই এক রাতে ইবাদাত করলে হাজার মাসের এবাদাতের চেয়ে বেশি হয় ।

১০ । শাওয়াল মাস

হাদিস শরিফে বর্ণনা করা হয়েছে , এই মাসের প্রথম রাতের প্রথম দিবসে প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা ১ বার এবং সুরা ইখলাস ২০ বার পাঠ করে দুই রাকাত করে মোট ৪ রাকাত নফল নামাজ আদায় করে তাহলে তার জন্য বেহেশতের দরজা খোলা হবে এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে ।

১১ । জিলকাদ মাস

এই মাসের প্রতি সোমবার যে ব্যক্তি রোজা রাখবে এবং ২৫ তারিখ রাতে প্রতি রাকাতে ১ বার সুরা ফাতিহা এবং সুরা ইখলাস ১০ বার পাঠ করে কয়েক রাকাত নফল নামাজ আদায় করে তাহলে তার সমস্ত ছগিরা গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে ।

১২ । জিলহাজ্জ মাস

হাদিস শরিফে বর্ণনা করা হয়েছে , মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন , হে মানবগন ! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য জিলহাজ্জ মাসকে অতি মহত্বপূর্ণ
করে সৃষ্টি করেছেন । এই মাসের ৯ , ১০ , ১১ তারিখে হজ্জ পালন করা হয় । ৯ তারিখে রোজা রাখলে আগের ও পরের ২ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায় ।

এই জিলহাজ্জ মাসের ১১ তারিখে পবিত্র ঈদ উল আযহা উদযাপন করা হয় । মহান আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে ১ টি করে পশু জবাই করা হয় ।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment