নেককার নারীর ৭ টি গুন । জেনে নিন বিস্তারিত

নারী ও পুরুষ একে ওপরের ওপর ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। একজন অন্যজনকে ছাড়া চলতে পারে না। বলা যায় একে অন্যের পরিপুরুক। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে , ‘তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।’ (সুরা বাকারা ,আয়াত নং : ১৮৭) নেককার নারীর ৭ টি গুন 

দাম্পত্য জীবনে নারীদের গুরুত্ব বেশি। কারণ স্বামী পুণ্যবান হলেও স্ত্রী যদি গুনাহগার হয় তাহলে সংসার সুখের হয় না। বলা হয়ে থাকে সংসার সুখী হয় রমণীর গুনে। 

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ,স্বামী পূণ্যবান হলেও গুনাহগার স্ত্রীর কারণে সংসার সুন্দর ও পবিত্র হয় না। কিন্তু স্ত্রীও যদি নেককার হন, তাহলে দাম্পত্য জীবন পরিণত হয় স্বর্গরাজ্যে। আর সেই স্বামী-স্ত্রীকে বলা হবে ‘জান্নাতে প্রবেশ করো তোমরা এবং তোমাদের স্ত্রীরা সানন্দে।’(সুরা জুখরুফ , আয়াত নং: ৭০)

মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন ,(তরজমা) পুরুষ নারীদের অভিভাবক, কারণ আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এ কারণে  যে, পুরুষগণ নিজেদের অর্থসম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীগণ অনুগত হয়ে থাকে। পুরুষের অনুপস্থিতিতে আল্লাহর  হিফাজতে (তার অধিকারসমূহ) হেফাযত করে।(সূরা নিসা ,আয়াত নং: ৩৪)

নেককার নারীর গুন 

একজন নেককার স্ত্রী তার স্বামীর সকল কথা মেনে চলে ,স্বামীর আদেশ নিষেধ মেনেচলে ,নিজ চরিত্রের হেফাজত করে।নেককার স্ত্রী হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ট সম্পদ। নেককার স্ত্রী কখনো চান না তার স্বামী বেনামাযী কিংবা দুর্নীতিপরায়ণ হোক। 

নেককার স্ত্রীর স্বামী যদিও বেনামাযী ও দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে থাকে তাহলে তার স্ত্রী তাকে সঠিক পথে নিয়ে আসে। স্ত্রী নেককার না হলে কখনো তার স্বামীকে সঠিক পথে আন্তে পারবে না। 

 আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী কারিম (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, নারীদের মধ্যে কোন নারী উত্তম। তিনি বললেন, স্বামী যাকে দেখলে আনন্দবোধ করে, যাকে আদেশ করলে আনুগত্য করে, স্ত্রীর বিষয়ে এবং সম্পদের ব্যাপারে স্বামী যা অপছন্দ করে তা থেকে বিরত থাকে। (মুসনাদে আহমদ: ৭৪২১; সুনানে নাসায়ি, কুবরা: ৮৯৬১)

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন , যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ,পরে রমজান মাসে রোজা রাখে ,স্বামীর আনুগত্য করে এবং নিজের লজ্জা স্থান হেফাজত করে তাহলে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে ,তার ইচ্ছানুযায়ী যেকোনো দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (মুসনাদে আহমদ ,হাদিস নং: ১৫৭৩)

 

নেককার নারীর গুন ৭ টি

 

১।  সতী – সাধ্বী ও দ্বীনদারী (নেককার নারীর গুন ) 

 

নেককার নারীর প্রথম গুন্ হলো সতী সাধ্বী ও দ্বীনদারী হওয়া। নেককার নারী  ইবাদাত বন্দেগী করে এবং সব সময় সঠিক পথে চলে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে কোনো খারাপ কাজে জড়িয়ে পরে না। নিজ চরিত্র হেফাজত করে থাকে। 

– হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুমিনের জন্য আল্লাহর ভয় অর্জনের পর নেককার স্ত্রীর চেয়ে কল্যাণকর কিছু নেই। কারণ স্বামী তাকে আদেশ করলে সে আনুগত্য করে, তার দিকে দৃষ্টিপাত করলে সে (স্বামী) মুগ্ধ হয়। তাকে নিয়ে শপথ করলে সে তা (শপথকৃত কর্ম) পূরণ করে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজেকে (অন্যায়-অপকর্ম থেকে) এবং স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ করে।’ (ইবনে মাজাহ)

হজরত মুহাম্মদ (সা) আরো বলেছেন ,‘দুনিয়া হলো ক্ষণিক উপভোগের বস্ত্ত। আর দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ (উপভোগের বস্ত্ত) সাধ্বী নারী।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

 

২।  স্বামীর অনুগত হওয়া ও বিশ্বস্ত হওয়া 

নেককার নারীর দ্বিতীয় গুন্ হলো স্বামীর অনুগত হওয়া ও বিশ্বস্ত হওয়া। কুরআনুল কারিমে কানিতাত শব্দ দিয়ে তা বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ও স্বামীর অনুগত নারীদের কানিতাত বলা হয়। 

আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী কারিম (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, নারীদের মধ্যে কোন নারী উত্তম। তিনি বললেন, স্বামী যাকে দেখলে আনন্দবোধ করে, যাকে আদেশ করলে আনুগত্য করে, স্ত্রীর বিষয়ে এবং সম্পদের ব্যাপারে স্বামী যা অপছন্দ করে তা থেকে বিরত থাকে। (মুসনাদে আহমদ: ৭৪২১; সুনানে নাসায়ি, কুবরা: ৮৯৬১)

 

৩।  সতীত্ব ও সম্পদের হেফাজত করা (নেককার নারীর গুন)

 

নেককার নারীর তৃতীয় গুণ হলো  স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার ধন-সম্পদ হেফাযত করবে এবং নিজের সতীত্বের হেফাযত করবে।

স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার ধন সম্পদ সংরক্ষণ করে রাখবে ,এবং নিজের সতীত্ব রক্ষা করে থাকবে। তার কোনো খেয়ানত হতে দিবে না। এ দুটো জিনিস একজন স্বামী তার স্ত্রীর নিকট  আমানত স্বরূপ রেখে যায়।

আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই এ দায়িত্ব আরোপিত। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللّهُ তথা নিজের সতীত্বের হেফাজত করা এবং স্বামীর (অনুপস্থিতিতে তার) ধন-সম্পদ হেফাজত করা। (সুরা নিসা ,আয়াত নং:আয়াত ৩৪)

 

৪।  পবিত্র ও চরিত্রবান হওয়া 

নেককার নারীর চতুর্থ গুন্ হলো পবিত্র থাকা এবং চরিত্রবান হওয়া। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,পবিত্র নারীরা পবিত্র পুরুষদের উপযুক্ত আর পবিত্র পুরুষরা পবিত্র নারীদের উপযুক্ত। (সুরা নুর : আয়াত ২৬ )

পবিত্র ও চরিত্রবান নারীদের আগ্রহ পবিত্র ও চরিত্রবান পুরুষদের প্রতি হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে পবিত্র ও চরিত্রবান পুরুষদের আগ্রহ পবিত্র ও চরিত্রবান নারীদের প্রতি হয়ে থাকে।জীবনসঙ্গী নির্বাচনে ইসলামে পবিত্র ও চরিত্রবান কে  প্রাধান্য দিয়েছেন। 

– হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন গুণের যে কোনো একটি গুণের কারণে নারীকে বিয়ে করা যায়- ধন-সম্পদের কারণে, রূপ-সৌন্দর্যের কারণে ও দ্বীনদারির কারণে। তুমি দ্বীনদার ও চরিত্রবানকেই গ্রহণ কর।’ (ইবনে আবি শায়বা, মুসনাদে আহমাদ)

 

৫। নিষ্কুলুষ চরিত্র 

নেককার নারীর পঞ্চম গুন্ হলো নিষ্কুলুষ চরিত্রের অধিকারী অর্থাৎ কোনো অবৈধ সম্পর্কে না জড়িয়ে বিয়ের মাধ্যমে চারিত্রিক পবিত্রতা সম্পন্ন হওয়া। 

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,‘তারা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চারিত্রিক পবিত্রতাসম্পন্ন হবে, ব্যভিচারিনী হবে না এবং গোপনে কোনো অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনকারিনী হবে না।’ (সুরা নিসা : আয়াত ২৫ )

৬।  সরলমনা হওয়া 

নেককার নারীর ষষ্ঠ গুন্ হলো সরলমনা হওয়া। সরলমনা নারীরা আল্লাহ ভীতু হয়। কোনো অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয় না। মিথ্যা কথা বলে না চল চাতুরী করে না।  পর্দা করে চলে ,অসৎ পথে কোনো কিছু করে না। 

 

৭।  ঘরে অবস্থানকারী নারী 

নেককার নারীর সপ্তম গুন্ হলো ঘরে অবস্থান করা। বিনা প্রয়োজনে বাহিরে না যাওয়া। গেলেও পর্দা করে বাহিরে বের হওয়া।পর্দা ছাড়া বাহিরে বের হলে শয়তান তাকে অনুসরণ করে। নারীরা ঘরের মধ্যে থাকলেও অনেক সওয়াবের অধিকারী হয়ে থাকে। 

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নারীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আগমন করে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! পুরুষরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ও অন্যান্য মর্যাদায় অগ্রগামী হয়েছেন। 

আমাদের জন্য কি এমন কোনো আমল রয়েছে যার মাধ্যমে মুজাহিদীনের সমপর্যায়ের মর্যাদা ও সওয়াবের অধিকারী হতে পারব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের থেকে যারা নিজ ঘরে অবস্থান করবে সেটাই তাদেরকে মুজাহিদদের ফজিলত ও সাওয়াবে উপনীত করবে।’ (মুসনাদে বাজজার, তাফসিরে ইবনে কাসির)

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,‘তোমরা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান কর। (পর পুরুষকে) সাজসজ্জা প্রদর্শন করে বেড়িও না। যেমন প্রাচীন জাহেলি যুগে প্রদর্শন করা হত।’ (সুরা আহজাব ,আয়াত নং : ৩৩)

জাহান্নাম কয়টি ও কি কি ? জাহান্নামের কোন স্তরে কারা থাকবে ?

Sharing Is Caring:

Leave a Comment