ইসলাম ধর্মের শ্রেষ্ঠ ইবাদাত হলো নামাজ।ইসলাম ৫ টি স্তম্ভের ওপর নির্মিত। নামাজ ইসলাম পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মহান আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেছেন। ফরজ শব্দের অর্থ হলো অবশ্যই পালনীয়। ফরজ তরফ হয়ে গেলে গুনাহ হয়। অর্থাৎ এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে গুনাহ হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ কাযা করলে গুনাহ হয়।
ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মেরাজের রাতে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং সেই সময় নবীজি তার উম্মতদের জন্য মহান সৃষ্টি কর্তার কাছ থেকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ হিসেবে আদায় করার নির্দেশনা লাভ করেন।
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শেষে মহান আল্লাহ তায়ালা কিছু দোয়া ও তাসবীহ পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যে গুলো পাঠ করলে অনেক ফজিলত পাওয়া যায়।মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন , আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার। (সূরা : আহযাব, আয়াত : ৩৫)
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রত্যেক নামাজের পর তাসবিহ পড়ার আদেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘ফাসাব্বিহহু আদবারাস সুজুদ’ দ্বারা তিনি এ অর্থ করেছেন। এর মানে ‘এবং সেজদাসমূহের সমাপ্তির পর’ অর্থাৎ নামাজ শেষে তাসবিহ পড়।’ (বুখারি)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনভর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সময়ে ৩টি আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলো- আয়াতুল কুরসি, ৩ কুল এবং ৩ তাসবিহ। এ আমলগুলো প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর এবং সকাল-সন্ধ্যায় করার কথা বলেছেন বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ (সা)
১। নিয়মিত আয়াতুল কুরছি পাঠ করা
আয়াতুল কুরছি পাঠের ফজিলত অনেক। এই আয়াতুল কুরছি সকাল ও সন্ধ্যায় এবং ঘুমানোর আগে পাঠ করতে বলা হয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে একবার আয়াতুল কুরছি পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরছি পড়বে, ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কিছু বাধা হবে না।’ (বুখারি, নাসাঈ, তাবারানি)
আর যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় ১ বার আয়াতুল কুরছি পড়ে তবে ওই ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার যাবতীয় অনিষ্ট ও ক্ষতি থেকে তাঁর নিরাপত্তায় নিয়ে যান।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন,‘রাতে যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরছি পড়ে ঘুমাবে তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন ফেরেশতাকে পাহারাদার নিযুক্ত করবেন। যে তোমার সঙ্গে থাকবে আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না।’
২। ৩ কুল পাঠ করা
পবিত্র কুরআনের শেষ তিনটি সূরা সূরা ইখলাস ,সূরা ফালাক ও সূরা নাস কে একসাথে তিন কুল বলা হয়। এই তিন কুল পাঠের অনেক ফজিলতের কথা হাদিস শরীফে বলা হয়েছে। ফজর আর মাগরিবের এই দুই ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস প্রতিটি তিনবার করে পড়া সুন্নত। অন্যান্য ফরজ সালাতের আদায় করে একবার করে এই তিন সুরা পড়ার কথা বলা হয়েছে।’ (আবু দাউদ)
সকাল-সন্ধ্যায় অর্থাৎ ফজর ও মাগরিবের পর ৩ বার এবং অন্য তিন ওয়াক্তে ১বার করে নিয়মিত ছোট্ট এ তিনটি সুরা তেলাওয়াত করলে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ৮টি বিশেষ নেয়ামতে ধন্য হবেন। তাহলো- জান্নাত; আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি; গোনাহ থেকে মুক্তি; দারিদ্র থেকে মুক্তি; বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি; জাদুটোনা থেকে মুক্তি; শয়তানের আক্রমণ থেকে মুক্তি; যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে মুক্তি।
৩। ৩ তাসবীহ পাঠ করা
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শেষে ৩ তাসবীহ পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল (সা) নিজেও নিয়মিত এই তিন তাসবীহ পাঠ করতেন। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর যে তাসবিহ পড়তে বলেছেন। তাহলো-
সুবহানাল্লাহ- ৩৩বার;
আলহামদুলিল্লাহ- ৩৩বার; এবং
আল্লাহু আকবার- ৩৩বার।
লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা-লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর- ১ বার
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার , ১ বার লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা-লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর পাঠ করবে, আল্লাহ তার সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন, যদিও গোনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।’ (সহিহ মুসলিম)।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) ৫ ওয়াক্ত নামাজ শেষে আরো যে দোয়া পাঠ করতেন
১। রাসূলুল্লাহ সাঃ প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে ৩ বার আসতাগফিরুল্লাহ্ বলতেন। (মুসলিম, ১২২২)
২। তারপর “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম” – এটি ১ বার পরতেন । (মুসলিম, ১২২১)
৩। ফজর ও মাগরিব নামাজ শেষে ১০ বার দরূদ শরীফ পাঠ করতে বলেছেন।
৫ ওয়াক্ত নামাজের পরে যে তাসবীহ পাঠ করা হয়
১। ফজর নামাজ শেষে তাসবীহ
বাংলায়: হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম
অর্থ : তিনি চির জীবিত ও চিরস্থায়ী।
২। জোহর নামাজ শেষে তাসবীহ
বাংলায়: হুয়াল আলিইয়্যাল আজীম
অর্থ : তিনি শ্রেষ্ট্রতর অতি মহান।
৩। আসর নামাজ শেষে তাসবীহ
বাংলায়: হুয়ার রাহমা- নুর রাহীম
অর্থ :তিনি কৃপাময় ও করুনা নিধান।
৪। মাগরিব নামাজ শেষে তাসবীহ
বাংলায়: হুয়াল গাফুরুর রাহীম
অর্থ : তিনি মার্জনাকারী ও করুণাময়।
৫। ইশার নামাজ শেষে তাসবীহ
বাংলায়: হুয়াল্ লাতিফুল খাবীর
অর্থ : তিনি পাক ও অতিশয় সতর্কশীল।