ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ হলো অন্যতম ইবাদত। নামাজ হলো ইসলামের প্রধান ইবাদত। নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহর ওপর ঈমান আনার প্রধান আমল হলো নামাজ। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন “নামাজ হলো বেহেশতের চাবি “
মনোযোগ সহকারে নামাজ পড়লে মৃত্যু পরে বেহেশত লাভ করা যাবে। নামাজ পরিত্যাগকারী ব্যক্তি কাফেরদের সমতুল্য। যে ব্যক্তি নামাজ অস্বীকার করে তাকে কাফের বলা হয়। আর যে ব্যক্তি নামাজকে বিশ্বাস করার পরে তা পরিত্যাগ করে তাকে ফাসেক বলা হয়।
কাফের এবং ফাসেক উভয় ব্যক্তি মৃত্যুর পরে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করবে। যদিও ফাসেক ব্যক্তি জাহান্নামের শাস্তি শেষে জান্নাতে প্রবেশ করার সুযোগ পাবে।
নামাজের বিধান মুসলমানের ওপর এমনভাবে অর্পিত হয়েছে যে ,যুদ্ধের ময়দানেও নামাজ ছাড়ার সুযোগ নেই। প্রয়োজনে মুসল্লিরা দুই দলে ভাগ হবে। এক দল নামাজ পরবে অন্য দল পাহারা দিবে। এভাবে হলেও নামাজ আদায় করতে হবে।
অসুস্থ অবস্থায় বিছানা থেকে উঠতে না পারলেও ইশারায় নামাজ পড়ার আদেশ দিয়েছেন।নামাজ দাঁড়িয়ে ,বসে ,শুয়ে ,ইশারায় যেভাবে সম্ভব নামাজ পড়তে হবে। হাশরের মাঠে সর্ব প্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নিবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ,নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্যকর্তব্য। (সূরা : নিশা ,আয়াত : ১০৩)
নামাজ না পড়লে মৃত্যু সাথে সাথেই কবরের আজাব শুরু হয়ে যাবে। মৃত্যু ব্যক্তির কবরে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করা হবে ,তার হাতে থাকবে লোহার মুগুর। ওই ফেরেশতা মৃত্যু ব্যক্তিকে বলতে থাকবে ,দুনিয়াতে কেন নামাজ পড়োনি ?আজ তার ফল ভোগ করো।
এটা বলে সে লোহার মুগুর দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। প্রত্যেক আঘাতের সময় বজ্রপাতের মতো শব্দ হতে থাকবে এবং শরীর চূর্ন -বিচূর্ণ হয়ে ৫০ গজ মাটির নিচে চলে যাবে। সে ফেরেশতা পুনরায় তাকে জীবিত করে হার মাংস এক করে আবার আঘাত করবে। এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।
বেনামাজি ব্যক্তির কবরে অসংখ্য সাপ বিচ্ছু দ্বারা পরিপূর্ন থাকবে। সাপ বিচ্ছু বেনামাজী কে দংশন করতে থাকবে।এতে তার এক পাঁজরের হার অন্য পাঁজরের হারের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যাবে । ওই সাপের এক বিন্দু লালা যদি পৃথিবীতে পড়ত তাহলে সব কিছু তামা হয়ে যেত। পৃথিবীতে কোনো কিছুই জন্মাত না।
বেনামাজিকে কিয়ামতের দিন জাহান্নামের গভির গর্তে নিক্ষেপ করা হবে ।পবিত্র কুরানে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন ,”তাদের পরে এলো অপদার্থ পরবর্তীরা ,তারা সালাত নষ্ট করল ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করল ।সুতরাং তারা অচিরেই ‘গাইয়া’প্রত্যক্ষ করবে ।”( সুরা মারিয়াম ,আয়াত সংখ্যা ৫৯ )
গাইয়া হল জাহান্নামের একটি স্থানের নাম ।যেখানে আছে রক্ত ও পুজের নিকৃষ্টতম আস্বাদ ।(তাফসিরে ইবনে কাসির ) ‘গাইয়া ‘জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম ।(তাফসিরে কাশশাফ ও নাসাফি)
নামাজ দ্বারা ঈমানদার ব্যক্তি ও কুফুরী ব্যক্তির পার্থক্য বোঝা যায়। হজরত জাবির (রা ) বলেন আমি হজরত মুহাম্মদ (সা) কে বলতে শুনেছি ,বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ছেড়ে দেয়া। (মুসলিম ,হাদিস নং : ১৪৮)
নামাজ না পড়লে শুধু মৃত্যুর পরেই শাস্তি ভোগ করতে হবে এমন না ,দুনিয়াতেও এর শাস্তি ভোগ করতে হবে। দুনিয়াতে বেনামাজীদের যে কষ্ট ভোগ করতে হবে তা হলো :
বেনামাজির দুনিয়াতে যে৬ টি কষ্ট ভোগ করতে হবে
১। বেনামাজির হায়াত কমে যাবে
২। বেনামাযীর জীবনে বরকত আসবে না
৩। বেনামাযীর চেহারার সৌন্দর্য থাকবে না
৪। বেনামাজির কোনো দোয়া কবুল হবে না।
৫। বেনামাজির সব নাকি বরবাদ হয়ে যাবে
৬। বেনামাজির নিকট হতে সব রহমতের ফেরেশতারা দূর হয়ে যাবে এবং একসময় ইসলাম থেকে সে খারিজ হয়ে যাবে।
এ ৬ টি বিপদ বেনামাযীর ওপর আসবেএবং মৃত্যুর সময় ও ৩ টি বিপদ বেনামাযীর ওপর আসবেই। তা হলো :
বেনামাজি মৃত্যুর সময় যে ৩ টি কষ্ট ভোগ করবে
১। বেনামাজি মৃত্যুর সময় অপমানিত ,লাঞ্ছিত ও অতি কষ্ট নিয়ে তার রূহ বের করা হবে।
২। বেনামাযী ক্ষুদার্থ অবস্থায় মারা যাবে।
৩। বেনামাজি মৃত্যুর সময় এত পিপাসা হবে যে ,মনে চাইবে সাত দরিয়ার পানিও মুখে ঢেলে দেয় ,তবুও বুঝি পিপাসা মিটবে না।
বেনামাজীকে হাশরের মাঠেও শাস্তি ভোগ করতে হবে।
হাশরের মাঠের ৩ টি আজাব হলো :
১। বেনামাযীকে আল্লাহ তায়ালা গজবের সহিত ডাকবেন এবং বিরাট একটি স্যাপ এসে তাকে খোঁজ করতে থাকবে।
২। ত্রিশ হাজার বৎসরের পুলসিরাতের রাস্তা ,যা হীরার চেয়ে ধারালো ,চুলের চেয়ে সুক্ষ এবং অমাবস্যার রাতের চেয়েও অন্ধকার। বেনামাযী যখন সেই পুলের ওপর পা রাখবে তখন তার পা কেটে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।
৩। বেনামাজির জন্য ‘ওয়াইল ‘নামক জাহান্নাম ঠিক করে রেখেছেন আল্লাহ তায়ালা।
এক হাদিসে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,দোজখের মধ্যে ‘জুব্বুল হুজুন ‘নামক একটি বিরাট আকারের ময়দান রয়েছে।
ওই স্থানটি বিচ্ছু দ্বারা পরিপূর্ণ। এক একটি বিচ্ছু খচ্চরের মত উঁচু ও মোটা এবং ভয়ংকর রকমের বিষাক্ত।বেনামাজিদেরকে দংশন করার জন্যই উহাদিগকে সৃষ্টি করা হয়েছে।