প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ ) সৃষ্টি জগতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা ও দয়ালু। জ্বীন -ইনসানসহ সকল মাখলুকাত একমাত্র তাঁর উছিলায় সৃষ্টি হয়েছে। নবী করিম (সাঃ ) কে সৃষ্টি না করলে অন্য কোনো মাখলুক সৃষ্টি হত না।
কুরআন পাকের ঘোষণা অনুযায়ী হযরত মুহাম্মদ সাঃ )কে রহমত স্বরূপ প্রেরণ করা হয়েছে। আমাদের প্রতি তাঁর অফুরন্ত অনুগ্রহ রয়েছে। এ অনুগ্রহের প্রতিদান পূর্ণভাবে আদায় করা কোনো উম্মতের পক্ষে সম্ভব নয়।
আমরা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ ) এর গুনগান করতে পারি সেজন্যেই আল্লাহ তায়ালা দুরুদ শরীফ নাজিল করেছেন। মুহাম্মদ (সাঃ )এর প্রশংসাই হচ্ছে দুরুদ। এই দুরুদ পাঠ মানুষের ঈমানি শক্তিকে বৃদ্ধি করে।
আল্লাহ তায়ালা মানুষের কল্যাণের জন্যই দুরুদ পাঠকেও নাজাতের মাধ্যম বানিয়েছেন। রাসূল (সাঃ ) এর কারণে আমরা কুরআন পেয়েছি ,হাদিস পেয়েছি এবং দ্বীনের সঠিক পথ পেয়েছি। ফলে তার প্রতি দুরুদ পাঠ করা অপরিহার্য।
মহানবী (সাঃ ) এর উপর দুরুদ পাঠ করা আমাদের জন্য খুবই সৌভাগ্যের বিষয়। আল্লাহ পাক ও ফেরেশতা গণ তার প্রতি দুরুদ প্রেরণ করেন এবং মুমিনদের মুমিনদের প্রতি দুরুদ পড়াকে কর্তব্য করেছেন।
স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ও ফেরেশতা গণ যে কাজ করেন তা মুমিনদের করতে বলেছেন। এর চেয়ে উত্তম ফযীলত পূর্ণ কাজ আর কি আছে।
এক হাদিসে এসেছে ,মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর এক বার দুরুদ পাঠ করবে আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার উপর ১০ টি রহমত বর্ষণ করবে ।
অপর এক হাদিসে এসেছে হযরত আনাস (রাঃ )থেকে বর্ণিত ,মহানবী (সাঃ ) বলেন ,যে ব্যক্তি আমার ওপর এক বার দুরুদ শরীফ পাঠ করে আল্লাহ তার ওপর ১০ টি রহমত বর্ষণ করেন ,১০ টি পাপ মোচন করেন এবং ১০ টি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। (মুসনাদে আহমদ :১\১০২ )
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ ) থেকে বর্ণিত ,তিনি বলেন ,রাসূলুল্লাহ (সাঃ ) বলেছেন ,কিয়ামতের দিন আমার কাছে অতি উত্তম হবে ওই ব্যক্তি যে আমার ওপর বেশি বেশি দুরুদ শরীফ পাঠ করে। (তিরমিজি )
রওযাতুল ওলামা নামক কিতাবে আছে , হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ ) হতে বর্ণিত ,যখন কোনো মুমিন নবী করিম (সাঃ ) এর ওপর দুরুদ পাঠ করে ,তখন আল্লাহ তায়ালা তার জন্য একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করেন।
দুরুদ শরীফ আমলের আশ্চর্য ঘটনা
একদা নীলনদ দিয়ে এক সওদাগরের একটি জাহাজ যাচ্ছিল। ঐ জাহাজে একজন সওদাগর দুরুদ শরীফ পাঠ করছিলো ,তখন দেখতে পেল একটি মাছ জাহাজের কিনারায় আসল। সে যতক্ষণ দুরুদ শরীফ পাঠ করছিলো ততক্ষন ওই মাছটি তা শুনছিলো।
হঠাৎ এক জেলের জালে মাছটি আটকা পড়লো। বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে গেল। হযরত ওমর (রাঃ ) বা হযরত আবু বকর (রাঃ ) বাজারে আসছিলেন যে একটি বড় মাছ কিনবেন এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ ) কে দাওয়াত করে খাওয়াবেন।
তিনি ওই মাছটি ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে গেলেন এবং তাঁর স্ত্রী কে ভালো করে রান্না করতে বললেন। তার স্ত্রী মাছটি রান্নার জন্য সব রকমের চেষ্টা করলেন ,কিন্তু তিনি রান্নার জন্য আগুন জ্বালাতে পারলেন না। আগুন নিজে নিজে নিভে যায়।
তারা উভয়ই চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নবী করিম (সাঃ ) কে ডেকে আনলেন এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। নবী করিম (সাঃ ) মাছটি দেখে বললেন ,দুনিয়ার আগুন কেন দোযখের আগুন ও জ্বালাতে পারবে না।
কারণ কোনো এক সময় একজন ভক্তির সাথে দুরুদ পাঠ করছিলো আর মাছ টি তা শুনছিলো। ওই অবস্থায় জালে আটকা পরে। সুতরাং দুনিয়ার আগুন কেন দোযখের আগুন ও তার জন্য হারাম হয়ে গেল।
দুরুদ শরীফ পাঠ ও শোনা এতই ফযীলত যে জ্ঞান বুদ্ধিহীন মাছ শুধু দুরুদ শরীফ শোনার জন্য এত মর্যাদা পেল। তাহলে আশরাফুল মাখলুকাত এমন মর্যাদা নিশ্চয়ই পাবে।
আল্লাহ তায়ালা অনেক গুলো দুরুদ শরীফ নাযিল করেছেন। তার মধ্যে সব থেকে শ্রেষ্ঠ দুরুদ হলো দুরুদ ইব্রাহিম।দুরুদ ইব্রাহিম নামাজের শেষ বৈঠকে পড়া হয়। তাছাড়াও দুরুদ শরীফ সব সময় পড়া যায়। যত বেশি দুরুদ পাঠ করবে তত বেশি সওয়াব পাবে।
দুরুদ শরীফ আরবি উচ্চারণ
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ. وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ’ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ. اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ. وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ. اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ.
দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদিউ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মদিম, কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা, ওয়া আলা আলি ইবরাহিমা, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।
দুরুদ শরীফ অর্থ
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর বংশধরের প্রতি রহমত নাযিল করো যেমন রহমত নাযিল করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি বরকত নাযিল করো যেমন বরকত নাযিল করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান। (সহীহ বুখারী, হাদীস:২৯৭০)