তিন কুল এর ফজিলত | নবিজী (সা.) তিন তাসবিহ ৩ কুল কেন পড়তেন?

তিন কুল কি ?

তিন কুল হলো যে সূরার শুরুতে কুল শব্দটি আছে এমন সুরাকে বুঝায়। এমন তিনটি সূরা হলো সূরা ইখলাস ,সূরা নাস ,সূরা ফালাক। যে তোমার সঙ্গে থাকবে আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না। ‘ সকাল-সন্ধ্যায় (ফজর ও মাগরিবের পর) ৩ বার এবং অন্য তিন ওয়াক্তে ১বার করে নিয়মিত ছোট্ট এ তিনটি সুরা তেলাওয়াত করলে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ৮টি বিশেষ নেয়ামতে ধন্য হবেন।

এই সূরা গুলো কুরআন শরীফের সর্ব শেষ সূরা। এই সূরাগুলো অনেক ফজিলতপূর্ণ। সূরা নাস ও সূরা ফালাক আলাদা আলাদা সূরা হলেও একই ঘটনার পেক্ষিতে এই দুই সূরা নাজিল করা হয়েছে। সূরা নাস ও সূরা ফালাককে একত্রে ‘মু – আওয়িযাতান ’ বলে।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) প্রতিদিন নিয়মিত তিন কুল পাঠ করতেন এবং সাহাবীদেরকেও পাঠ করতে বলতেন। 

৩ কুলের অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ 

সূরা ইখলাস আরবি উচ্চারণ :

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ 

اللَّهُ الصَّمَدُ 

 لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ 

 وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

বাংলা উচ্চারণ: কুল হুয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুচ্চামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ।

অর্থ : (হে রাসুল! আপনি) বলুন, তিনিই আল্লাহ, একক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। আর তার সমতুল্য কেউ নেই।’

সূরা ফালাক আরবি উচ্চারণ: 

قُلْ أَعُوذُ بِرَ‌بِّ الْفَلَقِ

مِن شَرِّ‌ مَا خَلَق

وَمِن شَرِّ‌ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ

وَمِن شَرِّ‌ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ

وَمِن شَرِّ‌ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ

বাংলা উচ্চারণ : কুল্ আ’ঊযু বিরব্বিল্ ফালাক্ব্।  মিন্ শাররি মা-খলাক্ব্।   ওয়া মিন্ শাররি গ-সিক্বিন্ ইযা-ওয়াক্বাব্।   ওয়া মিন্ শাররিন নাফ্ফাছাতি ফিল উক্বাদ্।  ওয়া মিন্ শাররি হা-সিদিন ইযা-হাসাদ্। 

অর্থ : আমি প্রভাতের স্রষ্টার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। তিনি যেসব সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে।   গভীর রাতের অনিষ্ট থেকে। এবং গিরায় ফুৎকার দেওয়া নারীদের (জাদুকারিনীদের) অনিষ্ট থেকে। এবং হিংসুক যখন হিংসা করে তখন তার অনিষ্ট থেকে।

সূরা নাস আরবি উচ্চারণ : 

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ

مَلِكِ ٱلنَّاسِ

إِلَٰهِ ٱلنَّاسِ

مِن شَرِّ ٱلْوَسْوَاسِ ٱلْخَنَّاسِ

ٱلَّذِى يُوَسْوِسُ فِى صُدُورِ ٱلنَّاسِ

مِنَ ٱلْجِنَّةِ وَٱلنَّاسِ

বাংলা উচ্চারণ: কুল আ‘ঊযুবিরাব্বিন্না-ছ,মালিকিন্না-ছ,ইলা-হিন্না-ছ।মিন শাররিল ওয়াছ ওয়া-ছিল খান্না-ছ।আল্লাযী ইউওয়াছবিছুফী সুদূরিন্নাছ-।মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-ছ।

অর্থ: বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি মানুষের পালনকর্তার,মানুষের অধিপতির,মানুষের মা’বুদের ,তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন করে,যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।

সূরা নাস ও সূরা ফালাকের  শানে নুযুল 

মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে, এক ইহুদি রমণীর সহযোগিতায় লবিদ ইবনে আছেম নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ‌ (সা.) এর ওপর জাদু করেছিল। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

হজরত জিবরইল আগমন করে সংবাদ দিলেন যে, জনৈক ইহুদি জাদু করেছে এবং যে জিনিসে জাদু করা হয়েছে, তা অমুক কুপের মধ্যে আছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) লোক পাঠিয়ে সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করে আনলেন। তাতে কয়েকটি গিরা ছিল। তিনি এই সূরা দু’টি পড়ে ফুক দেয়ায় গিরা গুলো সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায় এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে শয্যা ত্যাগ করেন।

তিন কুল পাঠের ফজিলত 

১।  মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় তিন কুল পাঠ করবে সে সকল প্রকার বিপদ – আপদ হতে নিরাপদে থাকবে।  (তিরমিযী) শয়তানের অনিষ্ট ও মানুষের জাদুটোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সকাল ও সন্ধ্যায় তিন কুল পাঠ করা খুব কার্যকর। 

২।  হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়তেন এবং উভয় হাতে ফুঁক দিতেন।

 তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন।’ (বুখারি)

৩। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ শেষে তিন কুল পাঠ করতে বলেছেন। ফজর ও মাগরিব নামাজ পরে সূরা ইখলাস , সূরা ফালাক , সূরা নাস তিন বার করে পাঠ করা সুন্নত। অন্য তিন ওয়াক্ত নামাজে একবার করে পাঠ করার কথা বলা হয়েছে। (আবু দাউদ)

৪। শরীরে অসুস্থতা অনুভব করলে তিন কুল পাঠ করে শরীরে ফুঁক দিতে হবে। হজরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত ,তিনি বলেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অসুস্থ হতেন, তখন তিন কুল পড়ে (হাতে) ফুঁ দিতেন এবং (নিজের শরীরে) হাত বুলাতেন। যখন তিনি অন্তিম শয্যায় শায়িত ছিলেন, তখন আমি তিন কুল পড়ে ফুঁ দিতাম এবং তার হাতে হাত বুলাতাম।(সহীহ বুখারী)

৫। সুরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ।সূরা ইখলাস পাঠ করলে পবিত্র কুরআন শরীফ তিন ভাগের এক ভাগের সমান সওয়াব পাওয়া যায়।  আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তিকে সুরা ইখলাস বারবার পাঠ করতে শোনেন। সকাল হলে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে হাজির হন এবং ব্যাপারটি তাঁর কাছে উল্লেখ করেন। আর ওই ব্যক্তি যেন উক্ত সুরার পাঠকে কম গুরুত্ব দিচ্ছিলেন। তখন নবী (সা.) বলেন, ‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ ওই সত্তার কসম! নিশ্চয়ই এ সুরা কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬৪৩)

৬।  সাহল ইবনে সাদ শায়েরি (রা) হতে বর্ণিত ,তিনি বলেন ,এক ব্যক্তি হজরত মুহাম্মদ (সা) এর নিকট দারিদ্রতার অভিযোগ করল। মহানবী (সা) বললেন ,যখন তুমি ঘরে যায় তখন সালাম দেবে এবং সূরা ইখলাস এক বার পাঠ করবে। এ আমল করার কিছু দিনের মধ্যে তার দারিদ্রতা দূর হয়ে যায়। (বুখারী)

৭ । তিন কুল পাঠ করলে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে ৮ টি বিশেষ নিয়ামত দেন করবেন। সেগুলো হলো : ১।  জান্নাত , ২।  আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি , ৩।  গুনাহ থেকে মুক্তি , ৪।  দারিদ্রতা থেকে মুক্তি , ৫। বলা – মুছিবত হতে মুক্তি , ৬।  জাদুটোনা থেকে মুক্তি , ৭। শয়তানের আক্রমণ হতে মুক্তি ,৮।  যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে মুক্তি। 

Sharing Is Caring:

Leave a Comment