তায়াম্মুম কি ?
তায়াম্মুম হল ওজুর বিকল্প ব্যবস্থা ।হাদিস শরিফে বর্ণনা করা হয়েছে ,’যাতুলজাইশ’ নামক এক জিহাদে যাওয়ার সময় হজরত মুহাম্মাদ (সা) তার স্ত্রী হজরত আয়েশা (রা) কে সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন ।
তখন হজরত আয়েশা (রা) এর বয়স ছিল ১৭ বছর ।এই বয়সে মেয়েদের গহনার প্রতি আকর্ষণ বেশি থাকে ।সফরে যাওয়ার সময় হজরত আয়েশা (রা) তার বড় বোন হজরত আসমা (রা) এর নিকট হতে গলার হাড় ধার নিয়ে গেলেন ।
যুদ্ধজয়ের পরে সবাই মদিনামুখে রওনা হল । পথে হজরত আয়েশা (রা) এর গলার হাড় হারিয়ে যায় । কোন জায়গায় হারটি ছিরে পরেছে তা হজরত আয়েশা (রা) বুঝতে পারে নাই ।
বুঝতে পেরে হজরত মুহাম্মাদ (সা) কে এ সংবাদ জানালেন। হজরত মুহাম্মাদ (সা) সেখানে তাবু ফেলে কয়েকজন লোককে হারের সন্ধানে
পাঠালেন।
তখন ফজর নামাজের সময় হয়ে আসে । সাহাবিরা দেখে অজু করার জন্য আশেপাশে কোথাও পানির ব্যবস্থা নেই । পানির অভাবে নামাজ কাজা হওয়ার আশংখ্যা
দেখা দিলে হজরত আবু বকর (রা) এর নিকট এ ঘটনা বললেন ।হজরত আবু বকর (রা) তখন হজরত আয়েশা (রা) এর নিকট গিয়ে দেখলেন ,হজরত মুহাম্মাদ (সা) হজরত আয়েশা (রা) এর হাঁটুতে মাথা রেখে ঘুমাইতেছেন ।
হজরত মুহাম্মাদ (সা) এর ঘুমের পরোয়া না করে আবু বকর (রা) তার মেয়েকে বকতে লাগলেন ,এক পর্যায়ে রেগে পাঁজরে আঘাত করলেন ।পিতার হাতের মার খেয়েও হজরত আয়েশা (রা) একটুও শব্দ করলেন না কারণ রাসুলুল্লাহ (সা) এর ঘুম যদি ভেঙ্গে যায় ।পুর্বাকাশে আলো ছড়াবার
পূর্বেই হজরত মুহাম্মাদ (সা) এর ঘুম ভেঙ্গে যায় ।
তিনি পানির অভাবের কথা এবং আয়েশার প্রতি হজরত আবু বকর (রা) এর তিরস্কারের কথা জানতে পারলেন ।
হজরত মুহাম্মাদ (সা) পানির জন্য চিন্তায় পরে গেলেন ।তখন মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ওজুর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে “তায়াম্মুম” করার কথা উল্লেখ করে একটি আয়াত নাজিল করেন ।বলা হয়েছে , যদি তোমরা পীড়িত হও , সফরের হালতে থাক , পায়খানা হতে আস , স্ত্রী
সঙ্গম করে করে পবিত্র হওয়ার জন্য পানি না
পাও তাহলে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে ।মুখ মণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে ।
যে অবস্থায় তায়াম্মুম করা যাবে
মহান আল্লাহ তায়ালা তায়াম্মুম করার নির্দেশ দিয়েছেন । কিন্তু সব সময় ওজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করা যাবে না ।মহান আল্লাহ তায়াল যে অবস্থায় তায়াম্মুম করার
নির্দেশ দিয়েছেন।
১ । এক মাইল এলাকার মধ্যে কোথাও পানি না পাওয়া গেলে তায়াম্মুম করা যাবে ।
২ । এক মাইলের মধ্যে পানি আছে কিন্তু নামাজের সময় কম। অজু করতে গেলে নামাজ কাজা হয়ে যাবে এমন অবস্থায় তায়াম্মুম করা যাবে ।
৩ । অজু করলে রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংখ্যা থাকলে তায়াম্মুম করা যাবে ।
৪ । মুসাফির অবস্থায় সাথে যে পানি আছে তা অজু ও গোসল করলে পিপাসায় মৃত্যু মুখে পতিত হতে পারে এমন অবস্থায় তায়াম্মুম করা যাবে ।
৫ । কোন গভীর জজ্ঞলে থাকলে সেখানে পানি পাওয়া যাবে কি না তা জানা না থাকলে এবং জিজ্ঞেস করিবার লোক না থাকলে তায়াম্মুম করা যাবে ।
৬ । পানির কুপ সামনে আছে কিন্তু পানি উঠাবার কোন ব্যবস্থা নাই এমন অবস্থায় তায়াম্মুম করা যাবে ।
৭ । যদি কয়েকজন একসাথে কোথাও সফরে যায় এমন অবস্থায় ওজু করতে গেলে লোকেরা তাকে ফেলে চলে গেলে প্রাণ নাশের আশংখ্যা আছে এমন অবস্থায় তায়াম্মুম করা যাবে ।
৮ । কোন ব্যক্তির অজু ও গোসলের জন্য তায়াম্মুম করতে হবে তাহলে তার আকবার তায়াম্মুম করলেই হবে । দুইটির জন্যই একসাথে নিয়ত করতে হবে ।না হলে যেটির নিয়ত করা হবে না সেটি আদায় হবে না ।
৯ । একই তায়াম্মুম দ্বারা কয়েক ওয়াক্ত নামাজ পরা যাবে । নামাজের উদ্দেশ্যে তায়াম্মুম করা হয়েছে তখন নামাজ ও পরা যাবে কুরআন ও স্পর্শ করা যাবে কিন্তু কুরআন শরিফ স্পর্শ করার জন্য তায়াম্মুম করা হয়েছে তখন নামাজ পরা যাবে না ।
১০ । যদি কোন স্থানে পানি পাওয়া যায় কিন্তু পানি কিনে ব্যবহার করতে হয় , পানি কেনার জন্য কাছে টাকা না থাকলে তায়াম্মুম করা যাবে ।
তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি ও কি কি ?
তায়াম্মুমের ফরজ ৩ টি । তা হল
১ । নিয়ত করা ।
তায়াম্মুমের নিয়ত
বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন আতায়াম্মামা লিরাফইল হাদাসি ওয়াস্তি বাহাতি লিছ ছলাতি ওয়াতাকার রুবান ইল্লালাহি তায়ালা ।
অর্থঃ আমি নাপাকি দূর করবার ,নামাজ শুদ্ধরুপে পরবার ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে তায়াম্মুম করছি ।
২ । অজুতে মুখ মণ্ডল যে পরিমান ধুতে হবে ,তায়াম্মুমে ঠিক সেই পরিমান মাসেহ করা ।তাহার কম হলে তায়াম্মুম শুদ্ধ হবে না ।
৩ । উভয় হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করা ।সামান্য চুল পরিমান স্থান বাদ পরলে তায়াম্মুম শুদ্ধ হবে না ।
তায়াম্মুমের সুন্নত কয়টি ও কি কি ?
তায়াম্মুমের সুন্নত ৬ টি । তা হল
১ । তায়াম্মুম শুরু করার সময় “বিসমিল্লাহ” বলা ।
২ । দুই হাতের আঙ্গুলগুলো বিস্তারিত অবস্থায় মাটিতে রাখা ।
৩ । দুই হাতের তালু মাটিতে রেখে সামনে পিছনে টানা ।
৪ । মাটি হতে হাত উঠিয়ে হাত ঝেরে ফেলা ।
৫ । যথাক্রমে মুখ মণ্ডল ,ডান হাত ও বাম হাত মাসেহ করা ।
৬ । পরপর তিনটি অঙ্গ মাসেহ করা
তায়াম্মুম যেভাবে করতে হবে
‘বিসমিল্লাহ’ বলিয়া তায়াম্মুমের নিয়ত করবে ।তারপর উভয় হাতের আঙ্গুল গুলি মাটি বা মাটি জাতিয় কোন পাক বস্তুর ওপর রেখে আকবার সামনে ও পিছনে টানবে ।
বেশি ধুলামাটি লাগলে হাত ঝেরে তারপর মুখ মণ্ডল মাসেহ করবে । তারপর আবার আগের নিয়মে মাটিতে দুই হাত রাখতে হবে ।
হাত উঠিয়ে ধুলা ঝারার প্রয়োজন হলে ঝেরে প্রথমে বাম হাতের সাহায্যে ডান হাত তারপর ডান হাতের সাহায্যে বাম হাত মাসেহ করতে হবে । তারপর পাঞ্জা ধরার মত
করে দু হাতের আঙ্গুল গুলি একবার খিলাল করবে । এভাবে তায়াম্মুম শেষ হবে । অন্য কোন অঙ্গ অথবা মুখ ও হাত তিন বার করে মাসেহ করার কোন প্রমান নেই ।
যা দ্বারা তায়াম্মুম করতে হবে
শুকনা মাটিতে তায়াম্মুম করা উত্তম ।বালি ,পাথর , চুলা ইত্যাদি মাটি জাতিয় কোন পবিত্র বস্তু দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে ।যে জিনিস মাটি জাতিয় নয় তা দিয়ে তায়াম্মুম করা
যাবে না । যেমন সোনা
অর্থাৎ যে বস্তু আগুনে পোড়ালে গলে যায় না বা পুরে কয়লা ও ছাই হয়ে যায় না এমন বস্তু দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে ।