জিম অর্থ হলো একত্রিত হওয়া ,সম্মিলিত হওয়া ,কাতারবদ্ধ হওয়া। শুক্রবার দিন যোহরের ওয়াক্তে যোহরের নামাজের পরিবর্তে জামায়াতের সাথে দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করা হয়। একেই জুমার নামাজ বলা হয় শুক্রবার অর্থাৎ জুমার দিন সকল মুসলিম জাতির শ্রেষ্ঠ দিন।
শুক্রবার হলো মুসলিম ব্যক্তিদের ঈদের দিন। কারণ এই দিনে সকল মুসল্লিরা এক সাথে জামায়াতের সাথে জুমার নামাজ আদায় করে। ফলে সবার সাথে দেখা হয় ,কথা হয় এবং খোঁজ খবর নেয়া যায়। অন্যন্য দিন নানা ব্যস্ততার কারনে অনেকেই এক হতে পারে না।
জুমার নামাজ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,’হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে তাড়াতাড়ি করো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ।
এরপর নামাজ সম্পন্ন হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা :জুমুআ , আয়াত সংখ্যা : ৯-১০)
জুমার নামাজের রাকাত সংখ্যা
জুমার ২ রাকাত নামাজ পড়া ফরজ। ২ রাকাত ফরজ নামাজ পড়ার আগে এবং পরে সুন্নত নামাজ রয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ১০ রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়।
জুমার নামাজ মোট ১০ রাকাত। সেগুলো হলো:
৪ রাকাত কাবলাল জুমা
২ রাকাত ফরজ
৪ রাকাত বাদল জুমা
জুমার নামাজের নিয়ত
চার রাকাত কাবলাল জুমার নিয়ত
বাংলা উচ্চারণ :
নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি ছালাতি কাব্লাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ ক্বাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।
অর্থ:আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহ্র ওয়াস্তে চার রাকায়াত কাবলাল জুম্মার সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।
জুমার ২ রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত
বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন্ উসকিতা আন্ জিম্মাতী ফারদুজ্জহ্রি, বি-আদায়ি রাকয়াতাই ছালাতিল্ জুমুয়াতি, ফারজুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ ক্বাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।
অর্থ:আমার উপর জুহরের ফরজ নামাজ আদায়ের যে দায়িত্ব রয়েছে, আমি কেবলামুখী হয়ে, জুম্মার দুই রাকায়াত ফরজ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তা পালনের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।
৪ রাকাত বাদাল জুমা নামাজের নিয়ত
বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি ছালাতি বাদাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ ক্বাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।
অর্থ: আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহ্র ওয়াস্তে চার রাকায়াত বাদাল জুম্মা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।
জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম
জুমার নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করতে হয় একাকী এ নামাজ আদায় করা যায় না। কিন্তু যদি কোনো কারণবশত জুমার নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করতে পারে না তারা একাকী জোহরের নামাজ আদায় করবে। যেমন : খুব অসুস্থ ব্যক্তি ,মুসাফির ব্যক্তি এরা একাকী জোহরের নামাজ আদায় করবে জুমার নামাজ নয়।
তবে মুসাফির ব্যক্তি চাইলে জামায়াতের সাথে জুমা নামাজ আদায় করতে পারবে। জুমার নামাজে দুই রাকাত ফরজ রয়েছে। তাছাড়া ফরজ নামাজের পূর্বে ৪ রাকাত কাবলাল জুমা এবং পরে ৪ রাকাত বাদাল জুমা আদায় করতে হয়। এই নামাজ গুলো মূলত সুন্নত নামাজ।
জুমার নামাজ যাদের ওপর ফরজ
১। বালেগ ব্যক্তির ওপর জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ। না- বালেগের ওপর জুমার নামাজ ফরজ নয় কিন্তু আদায় করলে সওয়াব পাবে।
২। একজন সুস্থ সবল পুরুষের ওপর জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ
৩। মুকিম ব্যক্তি অর্থাৎ স্থায়ী ভাবে বসবাস করছে তাদের ওপর জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ। মুসাফির ব্যক্তির ওপর ফরজ নয় কিন্তু আদায় করলে সওয়াব পাবে।
৪।যে ব্যক্তি ক্রীতদাস নয় সে ব্যক্তির ওপর জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ। ক্রীতদাস ব্যক্তির নয়।
জুমার নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গুনাহ। জুমার নামাজ ৪ শ্রেণীর লোক ব্যতীত সবার ওপর ফরজ।
৪ শ্রেণীর লোক গুলো হলো :
১। ক্রীতদাস
২। স্ত্রীলোক
৩। অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক
৪। মুসাফির ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তি
জুমার নামাজের ফজিলত
জুমার দিন অনেক ফজিলত পূর্ণ। এই দিনে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের আদি পিতা অর্থ্যাৎ প্রথম নবী হজরত আদম (আ ) এবং আদি মাতা হজরত হাওয়া (আ) কে জান্নাতে একত্র করেছিলেন। জুমার দিন জুমার নামাজের জন্য যে ব্যক্তি যত তাড়াতাড়ি মসজিদে যাবে সে ব্যক্তি তত বেশি সওয়াব পাবে।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন জুমার দিন আসে ফেরেশতারা মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রথম থেকে পর্যায়ক্রমে আগন্তুকদের নাম লিখতে থাকে। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি উট সদকা করে।
তারপর যে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি গাভী সদকা করে। তারপর আগমনকারী মুরগি সদকাকারীর মতো। তারপর আগমনকারী একটি ডিম সদকাকারীর মতো। এরপর যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন, তখন ফেরেশতারা তাদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনতে থাকেন। (বুখারি : ৮৮২)
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পরপর তিনটি জুমা বিনা ওজরে ও ইচ্ছা করে ছেড়ে দেবে, আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তির অন্তরে মোহর মেরে দেবেন। (তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)।
জুমার দিনে অন্যান্য আমল
১। জুমার দিন উত্তমরূপে গোসল করা। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে সেদিন নখ ও চুলকাটা একটি ভালো কাজ।
২। জুমার নামাজের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৩। মিসওয়াক করা।
৪। গায়ে তেল ব্যবহার করা।
৫। উত্তম পোশাক পরে জুমা আদায় করা।
৬। মুসল্লিরা ইমামের দিকে মুখ করে বসা।
৭। পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।
৮। জুমার দিন ও জুমার রাতে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা।
৯। বেশি বেশি দোয়া করা।
১০। মুসল্লিদের ফাঁক করে সামনের কাতারে না যাওয়া।
১১। সুযোগ থাকলে দু’রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ নফল আদায় করা।
১২। জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা।
হাদিস শরীফে বর্ণিত ,মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন , যখন জুমার দিন কোনো ব্যক্তি গোসল করে এবং সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করে, এরপর তেল মাখে বা ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে বের হয়, আর দুজনের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি না করে, এরপর সে তার জন্য ধার্যকৃত নামাজ আদায় করে এবং ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তার এই জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত (সগিরা গোনাহ) মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি : ৮৮৩)
অন্য হাদিসে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) আরো বলেছেন,যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত বিশেষ নুর (আলো) দ্বারা আলোকিত করে দেবেন। (বায়হাকি : ৬২০৯)