জাহান্নামীদের দেখতে কেমন হবে এবং তাদের খাদ্য ও পানীয় কি ?

হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,জাহান্নামবাসীদের গায়ের রং হবে কালো এবং চোখ দুটি দৃষ্টিশক্তিহীন ও কুরঞ্জিত বর্ণের হবে। তাদের কোনো বোধ – বুদ্ধি থাকবে না। মাথা পর্বতের মতো বিশাল হবে।দেহ হবে কর্মকারের হাপরের মতো। 

তাদের দেহে ৭০ টি চামড়া দিয়ে আবৃত থাকবে প্রতি দুইটি চামড়ার মাঝখানে ৭০ স্তর আগুন থাকবে। ভয়ঙ্কর স্যাপ বিচ্ছু দিয়ে তাদের পেট ভরা থাকবে।  

জাহান্নামীদের খাদ্য 

জাহান্নাম বাসীদের যে ধরনের খাদ্য দেয়া হবে। সেগুলো হলো:

১। জাক্কুম 

জাহান্নাম বাসীগণ যখন মহান আল্লাহর নিকট খাদ্য প্রার্থনা করবে তখন তাদের জাক্কুম নামক এক ধরনের কাঁটাযুক্ত বিষাক্ত বৃক্ষের ফল খেতে দেয়া হবে। যা খাওয়া মাত্রই পিটার ভিতরে সবকিছু উঠলে উঠবে। মাথার মগজ টগবগ করে ফুটবে। দাঁত গুলো খসে পর্বে ,মুখ দিয়ে আগুনে শিখা বের হতে থাকবে। নারী ভুরি সবকিছু গুহ্যদ্বার দিয়ে বের হয়ে আসবে। 

জাক্কুম দুর্গন্ধ ,তেতো ,কাঁটাযুক্ত এক ধরনের ভারী খাবার। এর গুচ্ছ হবে শয়তানের মাথার মতো। এটি জাহান্নামের নিম্নদেশ থেকে উদ্গত হবে। 

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মজীদে বলেছেন ,  আপ্যায়নের জন্য কি এটিই উত্তম, না যাক্কুম বৃক্ষ? সীমালংঘনকারীদের জন্য আমি এ সৃষ্টি করেছি পরীক্ষাস্বরূপ; এ বৃক্ষ জাহান্নামের তলদেশ হতে উদগত হয়, এর মোচা শয়তানের মাথার মত। সীমালংঘনকারীরা তা ভক্ষণ করবে এবং তা দিয়ে উদর পূর্ণ করবে। তার উপর অবশ্যই ওদের জন্য ফুটন্ত পানির মিশ্রণ থাকবে, অতঃপর অবশ্যই ওদের প্রত্যাবর্তন হবে জাহান্নামের দিকে। (সূরা :আস – সাফফাত ,আয়াত নং : ৬২-৬৮)

মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন , অতঃপর হে বিভ্রান্ত মিথ্যাজ্ঞানকারীরা! তোমরা অবশ্যই আহার করবে যাকুম বৃক্ষ হতে এবং ওটা দ্বারা তোমরা উদর পূর্ণ করবে। তারপর তোমরা পান করবে ফুটন্ত পানি পান করবে পিপাসার্ত উটের ন্যায়। কিয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আতিথ্য। (সূরা :ওয়াক্বিআহ, আয়াত নং:৫১-৫৬)

রাসুল (সা.) জাক্কুমের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন, ‘ওই জাক্কুমের সামান্য পরিমাণ যদি জাহান্নাম থেকে পৃথিবীতে আসে, তাহলে পৃথিবীর খাদ্য ও পানীয় তার বিষাক্ততায় বিনষ্ট হয়ে যাবে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৮৫)

২। যারী 

এতে কণ্টকবিশিষ্ট ফল ধরে থাকবে। এটা হবে দূর্গন্ধযুক্ত খাদ্য। এটা ভক্ষণে দেহ পরিপুষ্টও হবে না, ক্ষুধাও নিবৃত হবে না এবং অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। 

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন , তাদের জন্য বিষাক্ত কন্টক ব্যতীত খাদ্য নেই। যা পুষ্ট করে না এবং ক্ষুধা নিবারণ করে না। (গাশিয়াহঃ ৫-৭)

৩।  ‘জা-গুচ্ছাহ’ (গলায় আটকে যাওয়া খাবার) 

এটি এমন খাবার, যা কণ্ঠনালিতে আটকে থাকে এবং যেখান থেকে কোনো কিছু বের হতে পারে না এবং কোনো কিছু ঢুকতেও পারে না। বরং কদর্যতা, দুর্গন্ধ ও তিক্ততার কারণে সেখানে তা আটকে থাকে। 

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘আমাদের কাছে আছে শৃঙ্খল ও প্রজ্বলিত বহ্নিশিখা। আর আছে এমন খাদ্য, যা গলায় আটকে যায় এবং যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তি। ’ (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ১২-১৩)

৪।  ‘গিসলিন’ (রক্ত ও পুঁজ) 

জাহান্নামিদের শরীরের পচা দুর্গন্ধযুক্ত মাংসকে বা ফোড়া থেকে নির্গত পুঁজ ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিকে ‘গিসলিন’ বলা হয়। কেউ কেউ বলেন, ক্ষত নিঃসৃত স্রাবকে ‘গিসলিন’ বলা হয়। 

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘অতএব সেখানে সেদিন তার কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না এবং কোনো খাদ্য থাকবে না—রক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ ছাড়া। যা শুধুমাত্র অপরাধীরাই ভক্ষণ করবে। ’ (সুরা : হা-ক্কাহ, আয়াত : ৩৫-৩৭)

৫।  আগুনের অঙ্গার 

যারা আল্লাহর কালাম বেঁচে খায় এবং এতিমের মাল খায় তারা জাহান্নামের অঙ্গার খাবে। 

মহান আল্লাহ বলেছেন , আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যারা তা গোপন করে ও তার বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা কেবল আগুন দিয়ে আপন পেট পূর্ণ করে। শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে (পাপ-পঙ্কিলতা থেকে) পবিত্রও করবেন না; আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা :বাক্বারাহ,আয়াত নং: ১৭৪)

 নিশ্চয় যারা পিতৃহীনদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে, তারা আসলে নিজেদের উদরে অগ্নি ভক্ষণ করে। আর অচিরেই তারা জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে। (সূরা:নিসা,আয়াত নং:১০)

জাহান্নামীদের পানীয় 

১। হামিম (উত্তপ্ত পানি)

জাহান্নামীদের ফুটন্ত পানি পান করতে দেয়া হবে। তাদের  যখন জাক্কুম নামক কাঁটাযুক্ত ফল খেতে দেয়া হবে ,তা গলায় বিঁধে গেলে পানি পান করতে চাইবে। তখন তাদের ফুটন্ত পানি পান করতে দেয়া হবে। 

মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন , অতঃপর হে বিভ্রান্ত মিথ্যাজ্ঞানকারীরা! তোমরা অবশ্যই আহার করবে যাকুম বৃক্ষ হতে এবং ওটা দ্বারা তোমরা উদর পূর্ণ করবে। তারপর তোমরা পান করবে ফুটন্ত পানি পান করবে পিপাসার্ত উটের ন্যায়। কিয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আতিথ্য। (সূরা :ওয়াক্বিআহ, আয়াত নং:৫১-৫৬)

২। গাস্সাক (দুর্গন্ধযুক্ত পানি)

মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তারা আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পুঁজ। ’ (সুরা : স-দ, আয়াত : ৫৮)

৩।  ‘স-দিদ’ (ক্ষতস্থান থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত) 

‘স-দিদ’ বলা হয় ফোড়া বা ক্ষতস্থান থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজকে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের প্রত্যেকের পরিণাম জাহান্নাম এবং সবাইকে পান করানো হবে অপবিত্র দুর্গন্ধযুক্ত গলিত পুঁজ। যা সে অতি কষ্টে গলাধঃকরণ করবে, আর তা তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। তার কাছে মৃত্যুযন্ত্রণা আসবে চতুর্দিক থেকে। কিন্তু তার মৃত্যু হবে না এবং এরপর সে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। ’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ১৬-১৭)

৪।  ‘আল-মুহল’ (তৈলাক্ত গরম পানি) 

উত্তপ্ত তৈলাক্ত পানীয়কে ‘আল-মুহল’ বলে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা পানি চাইলে তাদের বিগলিত গরম তৈলাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় দেওয়া হবে, যা তাদের মুখমণ্ডল বিদগ্ধ করবে। এটা নিকৃষ্ট পানীয় আর জাহান্নাম কত নিকৃষ্ট আবাসস্থল!’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ২৯)

৫। তিনাতুল খাবাল (শরীর থেকে নির্গত ঘাম বা বিষাক্ত পুঁজ )

জাহান্নামীদের শরীর থেকে নির্গত ঘামকে তিনাতুল খাবাল বলা হয়। পৃথিবীতে যারা নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করত ও অহংকার করে চলত তাদেরকে জাহান্নামীদের শরীর থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম বা বিষাক্ত পুঁজ পান করতে দেয়া হবে। 

Sharing Is Caring:

Leave a Comment

Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

We have detected that you are using extensions to block ads. Please support us by disabling these ads blocker.

Powered By
Best Wordpress Adblock Detecting Plugin | CHP Adblock

সকল প্রকার ইসলামিক
বই । Video | Mp3