ঘুমানোর আগের দোয়া | ঘুমানোর আগে যে আমল করবেন

প্রতিটি মানুষের কাজই ইবাদত। ঘুম ও ইবাদাতের একটি অংশ। যদি কোনো ব্যক্তি ইসলামের নির্দেশিত পথে ঘুমায় ,তাহলে তার ঘুম ইবাদতে পরিণত হবে। ঘুম মানুষের ক্লান্তি দূর করে। শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ঘুমের অনেক প্রয়োজন।একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক ৭ -৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন।

আমাদের একেক জনের একেক অভ্যেস। কেউরাতের খাবার পরেই ঘুমাতে যাই ,কেউ খাবার অনেক সময় পরে ঘুমাতে যাই। ঘুম মানুষের মস্তিষ্কজনিত সকল প্রকার চিন্তা-ভাবনাকে দূর করে মস্তিষ্ক ও অন্তরের সকল প্রকার স্বস্তি ও শান্তি দান করে।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ,’তোমাদের ঘুম বা নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। (সূরা : আন -নাবা ,আয়াত নং: ৯ )

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) ঘুমানোর আগে যে কাজ গুলো করতে বলেছেন 

১ ঘুমানোর আগে বিছানা ঝেড়ে নিতে বলেছেন। 

২। ঘুমানোর সময় ডান পার্শ্বের ওপর শোয়া। 

৩। দোয়া পড়া। 

দোয়াটি হলো 

বাংলা উচ্চারণ 

‘আল্লাহুম্মা আস্লামতু নাফ্সী ইলাইকা ওয়া ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহী ইলাইকা ওয়া ফাউওয়ায্তু আমরী ইলাইকা ওয়ালজা’তু যাহরী ইলাইকা রাগ্বাতা ওয়া রাহবাতান ইলাইকা লা মালজা’আ মিনকা ওয়া লা মানজা’আ মিনকা ইল্লা ইলাইকা আ-মানতু বিকাতা-বিকা। আল্লাজি আনঝালতা ওয়া বি নাবিয়্যিকাল্লাযী আরসালাত।’

অর্থ 

‘হে আল্লাহ! আমি নিজেকে তোমাতে সমর্পণ করলাম, তোমার দিকে মুখ ফিরালাম, আমার কাজ তোমার প্রতি ন্যস্ত করলাম এবং তোমার প্রতি ভয় ও আগ্রহ নিয়ে তোমার আশ্রয় গ্রহণ করলাম।

তুমি ছাড়া কোনো আশ্রয়স্থল ও নাজাতের স্থান নেই। তোমার প্রেরিত কুরআনের প্রতি ঈমান আনলাম এবং তোমার প্রেরিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনলাম।’ (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

দোয়াটির  ফজিলত 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেন, হে অমুক, যখন তুমি বিছানায় ঘুমাতে যাবে তখন নামাজের ন্যয় অযু করবে। তারপর তোমার ডান পার্শ্বের ওপরে শুবে এবং উক্ত দোয়া পড়বে। 

তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি তুমি সেই রাতে মৃত্যু বরণ কর, তবে তুমি ইসলামের ওপর মৃত্যু বরণ করবে আর যদি তুমি ভোরে ওঠ, তবে তুমি কল্যাণের সঙ্গে ওঠবে।

রাসুল (সা) আরও যে আমল করতেন

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) ঘুমানোর আগে আরও দোয়া পাঠ করতেন ।আমাদের ও উচিত মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) এর পথ অনুসরণ করা ।হজরত মুহাম্মাদ (সা) যে  কাজ গুলো করতেন সব কাজই সুন্নত । মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) আরে যে দোয়া পাঠ করতেন তা হল ঃ 

১ ।দোয়া পরতেন

মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) যখন শয্যা গ্রহন করতেন ,তখন বলতেন 

উচ্চারণ 

‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আ’মু-তু ওয়া আ’হইয়া’

অর্থ 

‘হে আল্লাহ! তোমারই নামে আমি মৃত্যুবরণ করছি এবং তোমারই অনুগ্রহে জীবিত হব।’ (সহীহ বুখারী)

হজরত মুহাম্মাদ (সা) শোয়ার সময় ডান হাত  গালের নিচে রেখে আরেকটি  দোয়া পরতেন ।দোয়াটি  হল 

উচ্চারণ 

আল্লাহুম্মা ক্বিনী আ’যা-বাকা ইয়াওমা তাব’আছু ই’বা-দাকা

অর্থ 

‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার আযাব হতে রক্ষা কর, যেদিন তুমি তোমার বান্দাদেরকে কবর হতে ওঠাবে।’ (জামে আত-তিরমিজি)

২। তিন কুল পড়া 

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) ঘুমানোর আগের তিন কুল পড়তেন। তিন কুল হলো : সূরা ইখলাস ,সূরা নাস ,সুরা ফালাক পরা । 

দুই হাতের তালু একত্রে মিলিয়ে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ে তাতে ফুঁ দেবে। তারপর দুই হাতের তালুর মাধ্যমে দেহের যতোটা অংশ সম্ভব— মাসেহ করবে। মাসেহ শুরু করবে— মাথা, মুখমণ্ডল ও দেহের সামনের দিক থেকে (এভাবে ৩ বার করবে)। (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)

 ৩। আয়াতুল কুরসি 

মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন ,যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করে ঘুমাবে ,মহান আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তির কাছে একজন ফেরেশতাকে পাহারাদার নিজুক্ত করবেন ।ওই ফেরেশতা সারা রাত পাহারা দিবে কোন শয়তানকে তার কাছে আসতে দিবে না ।

৪ ।তাসবিহের আমল করা 

আল্লাহর রাসুল (সা.) তার মেয়ে ও জামাতা ফতেমা (রা.) ও হযরত আলী (রা.)- কে বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কিছু বলে দেবো না— যা তোমাদের জন্য খাদেম অপেক্ষাও উত্তম হবে? যখন তোমরা তোমাদের বিছানায় যাবে, তখন তোমরা (৩৩) বার সুবহানাল্লাহ, (৩৩) বার আলহামদুলিল্লাহ্ এবং (৩৪) বার আল্লাহু আকবার বলবে; তা খাদেম অপেক্ষাও তোমাদের জন্য উত্তম হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৭০৫)

৫ । সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা 

 রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, তবে এটিই তার জন্য যথেষ্ট। (বুখারি, হাদিস : ৫০৪০)

৬।  সূরা মূলক পাঠ করা 

রাসুল (সা.) বলেছেন, কোরআনের মধ্যে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। সুরাটি হলো তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক)। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯১)

Sharing Is Caring:

Leave a Comment