গর্ভ ধারণ করা এক জন নারীর পরম সৌভাগ্যের ও খুশির বিষয়। একজন নারী তখন পূর্ন রূপ পায় যখন সে গর্ভধারণ করে।গর্ভাবস্থায় একজন নারির যে কষ্ট ও বিপন্ন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয় তার জন্য ইসলামে মায়ের অনেক মর্যাদা দিয়েছেন।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত হজরত মুহাম্মদ (সা) ইরশাদ করেন, “আল জান্নাতু তাহতা আকদামুল উম্মুহাত” মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।”
গর্ভাবস্থায় অথবা সন্তান প্রসবের সময় যদি কোনো নারী মৃত্যুবরণ করে তাহলে হজরত মুহাম্মদ (সা) ওই নারীকে শহীদের মর্যাদা দান করে। তাকে বেহেশত নসিব করে।
হাদিস শরীফে আরো বলা হয়েছে , আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত— তিনি বলেন, নবীজি (সা.)-এর পুত্র ইবরাহিমের দুধমাতা সালামাকে (রা.) নবীজি (সা.) বলেছিলেন, তোমরা নারীরা কি এতে খুশি নও যে, যখন কোনো নারী তার স্বামীর পক্ষ থেকে গর্ভধারিণী হয় আর স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন, তখন সে আল্লাহর জন্য সর্বদা রোজা পালনকারী ও সারা রাত নফল ইবাদতকারীর মতো সওয়াব পেতে থাকবে?
তার যখন প্রসব ব্যথা শুরু হয় তখন তার জন্য নয়ন জুড়ানো কী কী নেয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়, তা আসমান-জমিনের কোনো অধিবাসীই জানে না। সে যখন সন্তান প্রসব করে তখন তার দুধের প্রতিটি ফোঁটার বিনিময়ে একটি করে নেকি দেওয়া হয়।
এ সন্তান যদি কোনো রাতে তাকে জাগিয়ে রাখে (কান্নাকাটি করে মাকে বিরক্ত করে ঘুমুতে না দেয়) তা হলে সে আল্লাহর জন্য নিখুঁত সত্তরটি গোলাম আজাদ করার সওয়াব পাবে।’ (তাবরানি, হাদিস : ৬৯০৮; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ৪/৩০৫)
গর্ভাবস্থায় যে আমল গুলো করতে হবে
১। গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে।
ভ্রুন অবস্থা থেকে মায়ের যাবতীয় চাল চলন ও গতি বিধির প্রভাব সন্তানের ওপর পরে। তাই একজন মায়ের উচিত সন্তান গর্ভে আসার সাথে সাথে যাবতীয় গুনাহ ও অনর্থক বিষয় পরিহার করা। হারাম হালাল মেনে চলা।
টিভি ,সিনেমা ,নাচ গান ইত্যাদি এরকম চিত্তবিনোদন জিনিস থেকে দূরে থাকা এবং পর্দার মধ্যে থাকা। তা না হলে সন্তান চরিত্রহীন হওয়ার আশংখ্যা থাকে।
এ সময় মা যদি নেক কাজ করে তার প্রভাব সন্তানের ওপর পরে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,”ইন্না মাআল উসরি ইউসরা “ অর্থ কষ্টের সঙ্গেই সুখ আছে। (সূরা : ইনশিরাহ ,আয়াত নং: ৬)
২। ধৈর্য ধারণ করতে হবে
গর্ভাবস্থায় নানা রকম অসুস্থতা দেখা যাবে এবং বেশি অস্থিরতা কাজ করবে। এই সময় ধৈর্যহারা না হয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করতে হবে।
৩। ওযু অবস্থায় থাকতে হবে
দৈহিক সুস্থতা ও আত্মিক প্রশান্তির ক্ষেত্রে অজুর ভূমিকা অপরিসীম। বিশেষত ঘুমানোর আগে অজু করে নেওয়া। এতে অনিদ্রার বিড়ম্বনা থেকে বাঁচা সহজ হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাজের অজুর মতো অজু করবে।’ (মুসলিম : ৪৮৮৪)
৪। সময় মতো নামাজ আদায় করতে হবে
গর্ভাবস্থায় সময় মতো নামাজ আদায় করতে হবে। এ সময় নানা রকম অস্থিরতা কাজ করে ,সাথে সময়ের নামাজ অন্তরকে প্রশান্ত রাখে। তাই যথা সময়ে নামাজ আদায় করতে হবে।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,নামাজের সময় হলে হজরত মুহাম্মদ (সা) বেলাল (রা) কে বলতেন ,নামাজের ব্যবস্থা করো এবং তার মাধ্যমে আমাকে তৃপ্ত কর। (আবু দাউদ ,হাদিস নং: ৪৩৩৩)
৫। কুরআন তেলাওয়াত করা
গর্ভের সন্তান ২০ সপ্তাহ পরে কোনো কিছু সোনার সক্ষমতা অর্জন করে। এ সময় মায়েরা যে কাজ গুলো করবে সন্তানের ওপর তার প্রভাব পরবে। এ সময় একজন মায়ের উচিত প্রতিদিন কিছু কুরআন তেলাওয়াত করে কুরআন ও সন্তানের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করা। সম্ভব হলে প্রতিদিন সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করা। কারণ এই সূরা অনেক ফজিলতপূর্ণ।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, ‘তোমাদের ওপর অবশ্যক হলো, তোমরা কোরআন শিক্ষাগ্রহণ করবে এবং তোমাদের সন্তানদের কোরআন শিক্ষা দেবে। কেননা এ বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এবং তার প্রতিদানও দেওয়া হবে।’ (শরহে সহিহ বুখারি, ইবন বাত্তাল : ৪৬ পৃ.)
৬। বেশি বেশি দোয়া ও জিকির করা
গর্ভকালীন সময়ে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে অধিক পরিমান দোয়া করা উচিত। কারণ এ সময়ের দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন।গর্ভাবস্থায় হজরত মারিয়াম (আ.)-এর মায়ের আমল থেকে শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে। মারিয়াম (আ.)-এর জন্মের পূর্বে যখন তার গর্ভধারিণী মাকে সন্তানের ব্যাপারে সুসংবাদ দেওয়া হলো, তখন তিনি মহান প্রভুর দরবারে যে দোয়াটি করেছিলেন সেটি সুরা আলে ইমরানের ৩৫ নাম্বার আয়াতে বিদ্যমান।
ইরশাদ হয়েছে, ‘ইমরানের স্ত্রী যখন বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমার গর্ভে যা রয়েছে আমি তাকে তোমার নামে উৎসর্গ করলাম সবার কাছ থেকে মুক্ত রেখে। আমার পক্ষ থেকে তুমি তাকে কবুল করে নাও। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞাত।’ মারিয়াম (আ.)-এর মায়ের এ দোয়ার মাহাত্ম্য জানার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এ দোয়ার ফলে আল্লাহ তায়ালা তাকে মারিয়াম (আ.)-এর মতো এমন রত্মগর্ভা কন্যা সন্তান দিয়েছেন যিনি পৃথিবীবাসীকে উপহার দিয়েছেন নবী ঈসা (আ.) কে।
নেক সন্তানের জন্য গর্ভবতী মায়েরা যে দোয়া গুলো পাঠ করতে পারে। সেগুলো হলো
১। উচ্চারণ : রাব্বি হাবলি মিনলাদুনকা জুররিয়াতান তাইয়িবাতান ইন্নাকা সামিউদ্দুয়া
অর্থ : হে আমার পালনকর্তা !আপনার পক্ষ হতে আমাকে পুৎ পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (সূরা আল ইমরান ,আয়াত নং: ৩৮)
২। উচ্চারণ: রাব্বি হাবলি মিনাস সালিহীন
অর্থ: হে আমার প্রতিপালক ! আপনি আমাকে সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দান করুন। (সূরা আস সাফফাত ,আয়াত নং:১০০)
৩। প্রতিদিন ঘুমানোর পূর্বে তিন কুল পরে হাতের তালুতে ফুঁক দিয়ে সারা শরীরে হাত বুলিয়ে নিতে হবে। এভাবে তিন বার করতে হবে। আয়াতুল কুরসী পাঠ করতে হবে। প্রতিদিন ফজর নামাজ পরে এবং রাতে ঘুমানোর পূর্বে সূরা ইখলাস ১১ বার পাঠ করতে হবে।
৭। বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকা যাবে না
গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুম না হলে স্বাস্থ্যহানি ঘটবে। সন্তানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।