মহান আল্লাহ তায়ালা বেহেশত বা জান্নাত তৈরি করেছেন ।যার প্রশস্ততা আকাশ ও জমিনের** বিস্তৃত** অনুযায়ী এবং *****সম্পর্কে কারো
কোন ধারনা নেই ।কিয়ামতের পরে মহান আল্লাহ রব্বূল আলামীন এড় প্রশস্ততা আর বৃদ্ধি করবেন ।জান্নাতের একটি দরজা থেকে আরেকটি
দরজার দূরত্ব হবে ৫০০ বছরের পথের সমান ।
হযরত কাব (রা) হতে বর্ণিত ,হযরত মূহাম্মাদ (সা) বলেছেন ,বেহেশতের গাছের কাণ্ডসমূহ হবে সবুজ ।যা কোন দিন শুকাবে না এবং এর পাতাও
কখনো ঝড়ে পরবে না ।আর ফলসমূহ কখনই শেষ হবে না ।জান্নাতের ভিতরে “তুবা” নামক একটি বৃক্ষ আছে যার মূল শ্বেত শুভ্র মতির তৈরি আর
ওপরের অংশ সোনার এবং মাঝের অংশ রূপার তৈরি ।
শাখা প্রশাখা যবরজদ পান্নার এবং পাতাগুলো সুনদুস নামক পদার্থ দীয়ে তৈরি ।বৃক্ষটি ৭০ হাজার শাখা বিশিষ্ট ।সেগুলো এতই ব্যাপক যে তার বড় শাখা গুলো আরশে আজিমের পায়ার সাথে এবং ছোট ডালগুলো আকাশের সাথে মিলে রয়েছে ।জান্নাতের প্রতিটি কামরায় তার একটি করে শাখা রয়েছে ।
সে বৃক্ষ প্রত্যেক জান্নাতিকে ছায়া এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী ফলফলাদি প্রদান করবে ।এই বৃক্ষটি হবে আকাশের সূর্যের সমতুল্য ।
হজরত আলী (রা) হতে বর্ণিত ,জান্নাতের বৃক্ষ হবে রূপার তৈরি কিছু কিছু শাখা হবে সোনার তৈরি ।দুনিয়ার বৃক্ষের মুল থাকে নিচের দিকে আর শাখা
প্রশাখা থাকে উপরের দিকে কিন্তু জান্নাতের বৃক্ষের মুল থাকবে উপরের দিকে আর শাখা প্রশাখা থাকবে নিচের দিকে ।
জান্নাতের মাটি মেশক আম্বর এ কাফুরের তৈরি হবে ।বাতাসের আলরনে বৃক্ষের পত্র পল্লব থেকে মনোমুগ্ধকর শব্দ শোনা যাবে ।ইহকালে মানুষ যখন
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের আরাধনায় নিমগ্ন থাকে তখন ফেরেশতা গন তাদের জন্য জান্নাতের ভিতরে অট্টালিকা তৈরি এবং বৃক্ষ রোপণ কাজে নিয়োজিত থাকে ।বান্দা যখনি জিকির থেকে বিরতি দেন ফেরেশতা গনও তাদের কাজ বিরতি দেন ।
হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন ,আমাকে যখন মিরাজের রাতে নভোমণ্ডল এবং ভূমণ্ডল পরিভ্রমন করানো হল তখন আমি বেহেশতের ভিতরে ৪ টি
নহর দেখতে পেলাম ।যেগুলো হতে পানি ,মধু,দুধ ও শরাব প্রবাহিত হচ্ছে ।আর এই নহর গুলোর উৎপত্তি স্থল হল “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ” থেকে ।
অর্থাৎ “বিসমি” থেকে পানির নহর ,”আল্লাহ ” থেকে দুধের নহর ,”আররাহমানুর” থেকে শরাবের নহর এবং “আরাহিমু”থেকে মধুর নহর
প্রবাহিত হচ্ছে।
নহর গুলোর নাম হল
১ । নহরে কাফুর
২ ।নহরে তাসনিম
৩ ।নহরে সালসাবিল
৪ । নহরে মাখতুম
হজরত মুহাম্মাদ (সা) এর ওপর ঘোষণা করা হয়েছে ,হে মুহাম্মাদ ! আপনার যেসব অনুসারীগণ এ নাম অর্থাৎ “বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম ” নিয়ে আমাকে স্মরণ করবে ,অবশ্যই তারা এ নহরগুলো থেকে পানি পান করে পিপাসা মিটাবে ।
জান্নাতে “হুরে – ইন ” বা বড় বড় চোখ বিশিষ্ট সুন্দরী পবিত্র রমণী থাকবে ।মহান আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে নিজ নুর দিয়ে তৈরি করেছেন ।
তারা “ইয়াকুত” ও “মারজান” পাথরের ন্যায় জ্যোতির্ময় ও সুন্দরি হবে ।তারা নিজ নিজ স্বামী ছাড়া আর কারো দিকে তাকাবে না কারো
দ্বারা স্পরশিত হবে না ।
তাদের সাথে জতই মিলন করা হবে ততই তাদের কুমারির মত অনুভুত হবে ।তাদের দেহে নানা রংয়ের ৭০ টি অলঙ্কার থাকবে ।সেগুলো
একটি পশম সমান ও ওজন হবে না ।তাদের হাড় ও হাড়ের মগজ অলঙ্কারের মধ্য দিয়ে দেখা যাবে ।তাদের কেশরাজি “ইয়াকুত” পাথর
ও মুক্তা খচিত হবে ।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,
“হুরুম মাক্সুরাতুন ফিল খিয়াম”
অর্থঃ তাবুতে আবদ্ধ হুরদের সাথে বিয়ে হবে ।(সুরাঃ আর – রাহমান ,আয়াত নংঃ ৭২)*****
এ সকল রমণীদের জন্য ৭০ টি লাল ইয়াকুত পাথরের তৈরি পালঙ্ক এবং পালঙ্কের ওপরে ৭০ টি মায়েদা বা তৈজসপত্র এবং প্রতিটি পাত্রে
এক হাজার সোনার পেয়ালা থাকবে ।তাদের স্বামীদেরকেও সমপরিমাণ প্রদান করা হবে ।অন্য পুণ্যবানেরা এ পরিমান নেয়ামত পাবে ।
জান্নাতের দরজা সমূহ
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন ৮ টি জান্নাত তৈরি করেছেন ।হজরত ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেছেন ,জান্নাত সর্বমোট ৮ টি দরজা
বিশিষ্ট হবে ।সেগুলো মহামুল্যবান মনিমুক্তা ও স্বর্ণখচিত হবে ।আর এই ৮ টি দরজা দিয়ে একেক রকম ব্যক্তি প্রবেশ করবে ।
প্রথম দরজা
জান্নাতের প্রথম দরজাতে কালেমা তায়্যেবা অঙ্কিত থাকবে ।এ দরজা দিয়ে নবি,রাসু্ল , আলেম , শহিদ ব্যক্তি ও দানশীলেরা
প্রবেশ করবে ।
দ্বিতীয় দরজা
জান্নাতের দ্বিতীয় দরজা দিয়ে সুন্দর ভাবে অজু সম্পাদনকারী ও নামাজ আদায়কারি গন প্রবেশ করবে ।
তৃতীয় দরজা
জান্নাতের তৃতীয় দরজা দিয়ে খুশিমনে যাকাত আদায়কারীগণ প্রবেশ করবেন ।
চতুর্থ দরজা
জান্নাতের চতুর্থ দরজা দিয়ে ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ ব্যক্তিগন প্রবেশ করবে ।
পঞ্চম দরজা
জান্নাতের পঞ্চম দরজা দিয়ে কু – প্রবৃত্তি ও লোভ লালসা দমনকারী ব্যক্তিগন প্রবেশ করবে ।
ষষ্ঠ দরজা
জান্নাতের ষষ্ঠ দরজা দিয়ে হজ্জ ও ওমরাহ্ পালনকারীগণ প্রবেশ করবে ।
সপ্তম দরজা
জান্নাতের সপ্তম দরজা দিয়ে বীর ধর্ম যোদ্ধারা প্রবেশ করবে ।
অষ্টম দরজা
জান্নাতের অষ্টম দরজা দিয়ে তাওহীদ ও একত্ববাদী , অবৈধ কিছু দেখা থেকে বিরত থাকা , পিতা – মাতা ও স্বজনদের সাথে সদাচরনকারী
ও অন্যান্য নেককার গন প্রবেশ করবে ।
প্রতিটি বেহেশতের পৃথক পৃথক নাম রয়েছে ।
বেহেশতের নাম সমুহ
১ ।’ দারুল মাকাম ‘ যা শুভ্র মুক্তার তৈরি
২ । ‘দারুস সালাম ‘ যা লাল ইয়াকুত পাথরের তৈরি
৩ । ‘দারুল কারার ‘ যা সবুজ পান্নার তৈরি
৪ । ‘জান্নাতুল খুলুদ ‘ যা হ্লুদ মারজান পাথরের তৈরি
৫ । ‘জান্নাতুল নাঈম ‘ যা রূপার তৈরি
৬ । ‘জান্নাতুল মাওয়া ‘ যা স্বর্ণের তৈরি
৭ । ‘জান্নাতুল আদন ‘ যা শুভ্র মোতি দিয়ে তৈরি
৮ । ‘জান্নাতুল ফেরদাউস ‘ এটা সর্বোত্তম বেহেশত ।
তার দুটি দরজা স্বর্ণ দিয়ে নির্মিত ।এর ইট একটি সোনার অপরটি রূপার ।তার গাঁথুনি মেশকের ।মেশক আম্বার ও জাফরান মেশানো
মাটি ।আর কুঠুরিগুলো “ল ‘ লু ” নামক মুল্যবান মুক্তা দিয়ে তৈরি ।কুঠুরির জানালা সমূহ ইয়াকুত এবং দরজা সমূহ জওহর দিয়ে তৈরি ।
তাতে ” আবে রহমত ” নামক ঝর্ণা রয়েছে ।
এর শাখা প্রত্যেক জান্নাতে রয়েছে । এটি পাথর ও কঙ্করগুলো মতির তৈরি ।সুন্দর কারুকার্যময় ।আবে রহমতের পানি বরফের চেয়ে
শীতল ,মধুর চেয়ে বেশি মিষ্টি আর দুধের চেয়েও বেশি সাদা ।আর তাতে থাকবে হজরত মুহাম্মাদ (সা) এর হাউজে কাওসার ।