কোন কোন সময় দোয়া কবুল হয় | যে সময় দোয়া করলে বেশি কবুল হয়

দোয়া অন্যতম ইবাদত। আমরা যখন কোনো বিপদে পরে  বা কোনো কিছু চেয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে হাত উঠাই ,এই চাওয়াটাকে আমরা দোয়া বলে থাকি। 

কোনো বান্দা যখন মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে হাত উঠায় ,তখন  আল্লাহ তায়ালা খুব খুশি হয়। আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল  ভালোবাসে। 

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ,আর আমার বান্দা যখন আপনার কাছে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে ,আমি তো কাছেই আছি। আমি দোয়া কবুল করি ,যখন সে আমার কাছে দোয়া করে। (সূরা : বাকারা ,আয়াত নং : ১৮৬)

দোয়াকে হজরত মুহাম্মদ (সা) ইবাদতের মগজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দার দোয়া সব সময় কবুল করে থাকেন। 

হজরত আলী (রা ) কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন ,হে প্রিয় আলী আমার দোয়া কবুল হয় না। তখন হজরত আলী (রা) বলেন ,হে আল্লাহর বান্দা যখনই দোয়া করবে তখন ৩ টি জিনিসঅবশ্যই  করবে। সে গুলো হলো :  

১। গায়েব এর জন্য দোয়া করলে নিজের দোয়া কবুল হবে। হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেন গায়েব এর দোয়া গায়েব এর জন্য কবুল হয়। 

২। দোয়ার আগে এবং দোয়ার শেষে দরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে। দোয়ার আগে এবং পরে দরূদ শরীফ পথ করলে দোয়া কবুল হয়। 

৩। আমাদের নবীকে অবশ্যই মনে করা। যখনই দোয়া করবে তখন মুহাম্মদ (সা) এর জন্য দোয়া করবেন। এতে আল্লাহর মনে ভালোবাসা চলে আসে ,তিনি দোয়া কবুল করেন। 

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বিভিন্ন হাদিসে দোয়া কবুল হওয়ার সুনির্দিষ্ট কিছু সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন। সে সময়ে দোয়া করলে মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে নিরাশ করেন না। সে সময় গুলো হলো : 

১। সেজদার সময়ের দোয়া 

কোনো বান্দা যদি নামাজের সেজদায় গিয়ে মহান রব্বুল আলামিনের কাছে কিছু চেয়ে দোয়া করে ,আল্লাহ তায়ালা ওই বান্দার দোয়া কবুল করেন। আল্লাহ তায়ালার সামনে যে মাথা নত করবে সে সফলতা অর্জন করবে ।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,যে সময়টাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে কাছে চলে যায় ,সে সময় হলো সেজদার সময়। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাও। (মুসলিম )

২।  শেষ রাত বা তাহাজ্জুদের সময়ের দোয়া 

আল্লাহ তায়ালা শেষ রাতের দোয়া বেশি কবুল করেন। কোনো বান্দা যদি ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের  করে আল্লাহর কাছে কোনো কিছু  চায় তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার মনের সকল আশা পুরুন করে দেন ।তাহাজ্জুদের নামাজ অনেক ফজিলতপূর্ণ ।

প্রতি রাতের শেষ  তৃতীয়াংশে আল্লাহ তায়ালা নিচের আসমানে নেমে আসে ।হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন ,প্রত্যেক দিন রাতের শেষ  তৃতীয়াংশে  মহান আল্লাহ তায়ালা নিচের আসমান (সবচেয়ে প্রথম ) নেমে আসেন এবং বলেন ,কে আছো ?আমাকে ডাক ,আমি তার ডাকে সারা দেব ।কে আছো ? আমার কাছে চাও ,আমি তমাকে দান করব।কে আছো ?আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ,আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব ।(বুখারি )

৩ ।আজানের সময়ের দোয়া 

আজানের সময় যদি কোন দোয়া করা হয় তাল্লাহ তায়ালা তা কবুল করে নেন ।আজানের মাধ্যমে মানুষকে সংকেত দেয়া হয় নামাজের জন্য ।

যখন বান্দা আজানের উত্তর দেয় এবং আল্লাহর কাছে দোয়া চায় ,আল্লাহ তায়ালা তার দোয়া কবুল করে নেন।হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন ,আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না ।(আবু দাউদ)

৪। ফরজ নামাজের পরের দোয়া 

ফরজ নামাজের পরে যে দোয়া করা হয় আল্লাহ তায়ালা সে দোয়া কবুল করেন। হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,শেষ রাতের দোয়া এবং ফরজ নামাজের পরের দোয়া কবুল হয়। (মুসলিম)

৫। ইফতারের সময়ের দোয়া 

ইফতারের সময়ের দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতারের সময় আল্লাহ তায়ালা কাছে কোনো কিছু চায় আল্লাহ তায়ালা তার দোয়া কবুল করে নেন। 

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,৩ ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তায়ালা কখনো ফিরিয়ে দেয় না। তারা হলো : রোজাদার ব্যক্তির দোয়া ,ন্যায় পরায়ন শাসক,নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া। (মুসনাদে আহমদ ,তিরমিযী )

৬। বৃষ্টি হওয়ার সময়ের দোয়া 

বৃষ্টির সময়ে যদি কোনো দোয়া করা হয় আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করে নেন। বৃষ্টি হলো আল্লাহর রহমত। বৃষ্টি মৃত মাটিকে রূহ ফিরিয়ে দেয়। বৃষ্টি সকল বান্দার জন্য খুশি নিয়ে আসে। এই সময় আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার দোয়া কবুল করেন। হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয় না ,তাহলো : আজানের সময়ের দোয়া ,বৃষ্টির সময়ের দোয়া। 

৭। জুমআর দিনের দোয়া 

জুমআর দিনের দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করে নেন। জুমআর দিনকে গরিবদের হজ্জের দিন বলা হয়েছে। সব ব্যক্তির হজ্জ্ব করার সামর্থ থাকে না। জুমআর দিন হলো গরিবদের হজ্জের দিন। এই দিনে আল্লাহ তায়ালার কাছে কোনো কিছু চাওয়া হলে আল্লাহ তায়ালা তা পুরুন করেন। 

মুহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন,‘জুমআর দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোনো মুমিন নামাজ পড়া অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে, আল্লাহ অবশ্যই সে চাহিদা পুরণ করবেন। এবং তিনি তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়ের সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন।’ (বুখারি)

৮। শবে কদরের রাতের দোয়া  

শবে কদরের রাতের দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে  সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরের রাত জেগে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে ,তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। ( সুনানে আবু দাউদ ,বুখারী )

৯। আরাফাতের দিনের দোয়া  

মহানবী হজরত মুহাম্মদ ( সা) বলেন ,দোয়ার মধ্যে সব চেয়ে শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো আরাফাতের দিনের দোয়া। (তিরমিযী)

১০। জিলহজ মাসের প্রথম ১০দিনের দোয়া 

জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন আল্লাহ তায়ালার কাছে যা চাওয়া হবে আল্লাহ তায়ালা তা পুরুন করে দিবে। 

এ ছাড়াও জমজম পানি পান করার আগের দোয়া ,সন্তানের জন্য পিতার দোয়া ,সফরের সময় ,মুমুর্ষ ব্যক্তির দোয়া  আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। 

Sharing Is Caring:

Leave a Comment