আমরা সাধারণত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কথা শুনেছি এবং এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে থাকি ।তবে এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি কোন বিশেষ কারনে আরও নামাজ আদায় করা হয় ।আর এই বিশেষ ধরনের নামাজের মধ্যে কসর নামাজ অন্যতম ।
কসর নামাজ শুধুমাত্র এক ধরনের ব্যক্তি আদায় করতে পারে । সবাই এ নামাজ আদায় করতে পারে না । এই এক ধরনের ব্যক্তি হল মুসাফির ব্যক্তি ।
কসর নামাজ কি ?
কসর শব্দের অর্থ কম করা , কমানো , সংক্ষিপ্ত করা । মুসাফির ব্যক্তির নামাজকে ইসলামে কসর বলা হয় ।মুসাফির ব্যক্তির চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজকে সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাত করে পরাকেই কসর নামাজ বলা হয় ।
আমরা অনেক সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে সফরে বা ভ্রমণে বের হই ।যার কারনে আমাদের পূর্ণ নামাজ আদায় করতে অসুবিধা হয়ে পরে ।ফলে মূল নামাজকে সংক্ষিপ্ত করে আদায় করার বিধান রয়েছে ।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন , তোমরা যখন জমিনে সফর করবে ,তখন তোমাদের জন্য নামাজ কসর করার কোন আপত্তি নেই । (সুরাঃ নিসা ,আয়াত নংঃ১০১)
মুসাফির ব্যক্তি যদি সফর অবস্থায় ইচ্ছাকৃত ভাবে চার রাকাত পূর্ণ নামাজ আদায় করে তাহলে তার গুনাহ হবে ।এ ক্ষেত্রে পুনরায় নামাজ আদায় করা ওয়াজিব ।
আর যদি ভুলক্রমে চার রাকাত শুরু করে দেয় এবং প্রথম বৈঠক করে থাকে, তা হলে সিজদা সাহু করে নিলে ফরজ নামাজ আদায় হয়ে যাবে। আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে, তা হলে ফরজ আদায় হবে না, আবারও পড়তে হবে।(বাদায়েউস সানায়ি : ১/৯১)
কসর নামাজ কাদের জন্য ?
কসর নামাজ মুসাফির ব্যক্তিরা আদায় করে । কোন ব্যক্তি যদি তার আবাস্থল থেকে ৪৮ কিলোমিটার বা ৭৮ মাইল দূরে সফরের নিয়তে বের হন তাহলে সে মুসাফির বলে গন্য হবে ।
আকাশ পথে বা পাহারে বা জলে যেভাবেই ভ্রমন করুক না কেন সবার দূরত্ব স্থল ভাগের দূরত্বের সমানই হবে । এদের কসরের নামাজ আদায় করতে হবে ।
যদি কোন ব্যক্তির একাধিক বাসস্থান থাকে তা ৪৮ কিলোমিটারের দূরে তাহলে ঐ ব্যক্তির জন্য কসরের নামাজ আদায় করতে হবে না । সে যে বাড়িতেই অবস্থান করুক না কেন সে মুকিম হয়ে থাকবে ।তার পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে ।
কোন মহিলার বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ির দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটারের বেশি হলে সেই মহিলা যদি বাবার বাড়িতে বেরাতে আসে তাহলে তাকে কসর নামাজ আদায় করতে হবে । কেননা তার প্রকৃত আবাস্থল হল তার স্বামীর বাড়ি ।যদি ৪৮ কিলোমিটারের কম হয়ে থাকে তাহলে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে ।
কসর নামাজ কতদিন আদায় করতে হয়
যদি কোন ব্যক্তি সফরে ৪৮ কিলোমিটার দূরে ১৫ দিন বা ১৫ দিন এর কম সময় ভ্রমন করে তাহলে তাকে কসরের নামাজ আদায় করতে হবে ।কিন্তু ১৫ দিন এর বেশি সময় ভ্রমণে থাকার নিয়ত করে তাহলে তাকে কসরের নামাজ আদায় করতে হবে না ।
তাকে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে ।কারণ ১৫ দিন এর বেশি হলে তখন সে আর মুসাফির থাকবে না ।সে মুকিম হয়ে যাবে ।তাকে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে ।
যদি ১৫ দিনের কম সময় থাকার নিয়ত করে সফরে বের হয়েছেন কিন্তু কোন কারনবশত যাওয়া হচ্ছে না তাহলে ১৫ দিন এর বেশি থাকলেও কসরের নামাজ আদায় করতে হবে ।
কসর নামাজ কত রাকাত আদায় করতে হবে ?
আমরা আগেই জেনেছি কসর নামাজে ৪ রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ কমিয়ে ২ রাকাত আদায় করতে হয় ।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে জোহর ,আসর ও ইশার নামাজ ৪ রাকাত ।
এই ৪ রাকাত নামাজ দুই রাকাত করে আদায় করতে হবে ।ফজরে ২ রাকাত ই আদায় করতে হবে এবং মাগরিবে ৩ রাকাত ফরজ নামায় আদায় করতে হবে । এই দুই ওয়াক্ত নামাজের কসর নেই
।ইশার নামাজে ২ রাকাত কসর আদায় করে ৩ রাকাত বেতর নামাজ আদায় করতে হবে ।ইশারে ২ রাকাত কসর ও ৩ রাকাত বেতর এই মোট ৫ রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে ।
কসর নামাজের নিয়ত
আমরা যেভাবে ফরজ নামাজের নিয়ত করি ঠিক সেভাবে ফরজ সালাতের মত করে কিবলামুখী হয়ে নিয়ত করতে হবে শুধুমাত্র সেখানে কসরের নামাজ এবং দুই রাকাত কথাটি উল্লেখ করে দিতে হবে।
কিন্তু আপনাদেরকে কসর নামাজ আদায়ের জন্য নিয়ত সঠিক রাখতে হবে এবং সেই নিয়ত আরবীতে অথবা বাংলায় উচ্চারণ করতে পারবেন। তাছাড়াও আপনারা মনে মনে কসর নামাজের নিয়ত করে নিতে পারবেন।
কসর নামাজের ফজিলত
কসর নামাজের ফজিলত অনেক । মহান আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের কল্যানে ধর্মীয় বিধান গুলো অনেক সহজ করে দিয়েছেন ।
কসরের নামাজের ফজিলতের কথা বর্ণনা করে মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন , তোমরা সফরে নামাজকে কসর করো এর মধ্যেই রয়েছে উত্তম প্রতিদান ।(বায়হাকি)
ইমামে আজম আবু হানিফা (রহ:) বলেন, সফরে ৪ রাকাত নামাজকে ২ রাকাতই পড়তে হবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা এ ২ রাকাতের বিনিময়ে ৪ রাকাতের প্রতিদান তো দেবেনই, সেই সাথে মুসাফির অবস্থায় নামাজ পড়ার সওয়াব অনেক বেশি। তাই সফরে কসর না পড়ে পূর্ণ নামাজ পড়া যাবে না।
কসর নামাজের অন্যান্য মাসআলা
মুসাফির ব্যক্তি ইমামতি করলে মুক্তাদিদের আগেই বলে দেবে যে সে মুসাফির এবং দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবে আর মুকিম নামাজিরা দাঁড়িয়ে বাকি দুই রাকাত আদায় করে নেবে।
মুসাফির ব্যক্তি যদি মুকিম ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করে, তাহলে ইমামের অনুসরণে সেও চার রাকাত পড়বে।কিন্তু যদি একাকী আদায় করে তাহলে তাকে ২ রাকাত কসর আদায় করতে হবে ।
মুসাফির অবস্থায় যদি কোনো নামাজ কাজা হয়ে যায়, আর তা বাড়ি ফিরে পড়েন তাহলে কসরই পড়বেন এবং বাড়ি থাকা অবস্থায় কোনো কাজা নামাজ যদি সফরে আদায় করেন তবে তা পূর্ণ নামাজই পড়তে হবে।
মুসাফির ব্যক্তির ব্যস্ততা থাকলে ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্যান্য সুন্নত নামাজ ছেড়ে দেবেন। তবে ব্যস্ততা না থাকলে সুন্নত পড়া উত্তম। প্রত্যেক নামাজের নিয়ত করতে হবে, কোন ওয়াক্তের কসর পড়বেন।