ইসলামে কোনো কাজই সওয়াব শূন্য নয়। মুসলমানগণ আনন্দ করার পাশাপাশি ইবাদাত বন্দেগী করে নেকি লাভ করে থাকে। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদ। মুসলমান প্রতি বছরে দুইটি ঈদ পালন করে।
কখন থেকে ঈদ পালন করা হয়?
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) মদিনায় হিজরত করে দেখতে পান ,মদিনার পারসিকদের প্রভাবে শরতের পূর্ণিমায় “নওরোজ উৎসব “ এবং বসন্তের পূর্ণিমায় “মিহিরজান উৎসব” উদযাপিত হয়।
এই দুইটি উৎসবের রীতিনীতি ইসলামী রীতিনীতির বিপরীত ছিল বলে হজরত মুহাম্মদ (সা) তাতে যোগদান করতে নিষেধ করেন। এই দুই উৎসবের পরিবর্তে মুসলমানদের দুইটি ঈদ পালনের রীতি প্রবর্তন করেন। ঈদ দুইটি হলো : ১। ঈদুল ফিতর ২। ঈদুল আয্হা।
ঈদুল ফিতর ও ইদু আজহার দিনে অতিরিক্ত ৬ তাকবীর দিয়ে ২ রাকাত নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। নামাজ এবং ৬ তাকবীর উভয়টাই ওয়াজিব।
ঈদুল ফিতর
ঈদুল ফিতর শব্দটি আরবি শব্দ। ঈদ শব্দের অর্থ খুশি আর ফিতর শব্দের অর্থ হলো প্রকৃতি স্বভাব ,উপবাস ভঙ্করন। রমজান মাসে দীর্ঘ ১ মাস রোজা পালনের পরে শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে মুসলমানগণ এই উৎসব উদযাপিত করে থাকে।
দীর্ঘ ১ মাস রোজা পালনের পরে মুসলমানগণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এই উপলক্ষে আনন্দ করে থাকে এজন্য এই উৎসবের নাম ঈদুল ফিতর বা স্বাভাবিক প্রত্যাবর্তন বলা হয়।
ঈদুল ফিতরের রাতে ফজিলত অনেক। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) যে পাঁচ রাতে দোয়া কবুল হওয়ার কথা বলেছেন তার মধ্যে ঈদুল ফিতরের রাত অন্যতম।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,প্রত্যেক জাতিরই খুশির দিন থাকে ,আর আমাদের খুশির দিন হলো ঈদুল ফিতরের দিন। (বোখারী ,মুসলিম )
হাদিস শরীফে আরো বলা হয়েছে , যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও নেকি অর্জনের উদ্দেশ্যে ইবাদাত বন্দেগী করে রাত জেগে থাকে তাহলে সেইদিন তার অন্তর মারা যাবে না সেদিন সমস্ত অন্তর মারা যাবে। (ইবনে মাজাহ ,তারগীব)
ঈদুল ফিতর নামাজের নিয়ত
আরবি উচ্চারণ :
نَوَيْتُ أنْ أصَلِّي للهِ تَعَالىَ رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتِّ التَكْبِيْرَاتِ وَاجِبُ اللهِ تَعَالَى اِقْتَضَيْتُ بِهَذَا الْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ
বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাইন সালাতিল ইদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি ওয়াঝিবুল্লাহি তাআলা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াঝঝিহান ইলা ঝিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি ‘আল্লাহু আকবার’
অর্থ: আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি- আল্লাহু আকবার
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
প্রথম রাকাত
১। নিয়ত করে তাকবীরে তাহরীমা ‘আল্লাহু আকবার ‘বলে উভয় হাত বাঁধতে হবে।
২। তারপর ছানা পড়তে হবে। ছানা উচ্চারণ:’সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতাআলা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
৩। তারপর অতিরিক্ত ৩ তাকবীর দেয়া। এক তাকবীর থেকে আরেক তাকবীরের মধ্যে ৩ তাসবীহ পরিমান সময় বিরত থাকা।
৪। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবীরে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেয়া। তৃতীয় তাকবীরে উভয় হাত তাকবীরে তাহরীমার মতো বাঁধতে হবে।
৫। ‘বিসমিল্লাহ ‘সহ সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে তারপর যেকোনো সূরা মিলিয়ে পাঠ করতে হবে।
৬। তারপর অন্য নামাজের মতো রুকু ও সেজদা করে প্রথম রাকাত নামাজ শেষ করা।
দ্বিতীয় রাকাত
১। ‘বিসমিল্লাহ ‘ সহ সূরা ফাতিহা পাঠ করে তারপরে যেকোনো সূরা মিলিয়ে পড়া।
২। সুরা মিলানোর পর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া।
৩। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া।তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নিতে হয়।
৪। এরপর রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাওয়া।
৫। সেজদা আদায় করে
৬। বৈঠকে বসা; তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।
৭। নামাজের সালাম ফেরানোর পরে তাকবীর পড়া।
তাকবীর হলো :
উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
৮। নামাজের পর ইমাম সাহেবের দুইটি খুতবা দেওয়া।
ঈদের নামাজ পড়ার পর ইমাম খুতবা দেবে আর মুসল্লিরা খুতবা মনোযোগের সঙ্গে শুনবে। অবশ্য অনেকেই খুতবা না দেওয়ার ব্যাপারে শিথিলতার কথা বলেছেন। খুতবা না দিলেও ঈদের নামাজ আদায় হয়ে যাবে বলে মত দিয়েছেন।
ঈদুল আয্হা
জিলহজ মাসের ১০ তারিখে মুসলমানদের জন্য আরেকটি খুশির দিন উপস্থিত হয়। তা ঈদুল আজহা নাম পরিচিত। ঈদ শব্দের অর্থ খুশি আর আয্হা শব্দের অর্থ হলো কুরবানী। মুসলমানগণ এই দিনে উট ,গরু ,ছাগল ,ভেড়া ,দুম্বা ইত্যাদি পশু আল্লাহর নাম কুরবানী করে এই উৎসব উদযাপন করে থাকে।
ঈদুল আয্হা নামাজের নিয়ত
আরবি উচ্চারণ :
نويت ان اصلي لله تعالي ركعتي صلاة العيد الاضحى مع ستة تكبيرات واجب الله تعالى اقتديت بهذا الامام متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر
বাংলা উচ্চরণ :
‘নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা আলা রাকয়াতাই ছালাতি ঈদিল আযহা মাআ ছিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তা আলা ইক্বতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
ঈদুল আয্হা নামাজের নিয়ম
ঈদুল আয্হা নামাজের নিয়ম ঈদুল ফিতর নামাজের মতোই। শুধু নিয়ত আলাদা করতে হবে।
ঈদের দিনে সুন্নত কাজগুলো হলো
১। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা।
২। মিসওয়াক করা ও গোসল করা
৩। সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন পোশাক পরিধান করা
৪। আতর ব্যবহার করা
৫। সাধ্য পরিমান খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা।
৬। ঈদের নামাজে যেতে অযথা বিলম্ব না করা।
৭। ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে মিষ্টি জাতীয় কিছু খেয়ে যাওয়া আর ঈদুল আয্হার দিনে সকালে কিছু না খেয়ে কুরবানীর গোশত দিয়ে খাওয়া শুরু করা।
৮। ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই ‘ছদ্কায়ে ফিতর’ আদায় করা।
৯। ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা
১০। ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া
১১। ঈদের নামায ঈদগাহে গিয়ে পড়া, সম্ভব না হলে মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামায পড়া।
১২। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পথে নীরবে তাকবীর বলা আর ঈদুল আয্হার দিনে উচ্চস্বরে তাকবীর বলা।
তাকবীর হলো:
উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’