আকিকার নিয়ম কানুন এবং গুরুত্ব 

আকিকা শব্দটি আরবি শব্দ। আকিকা শব্দের অর্থ কর্তন করা বা কেটে ফেলা । মুসলমানদের  জন্য আকিকা  সুন্নত। আকিকাকে সুন্নতে মু’আক্কাদাহ বা নিশ্চিত সুন্নত বলা হয়। নবজাতক শিশুর জন্ম উপলক্ষে পশু জবাই করাকে আকিকা বলে। 

সন্তানের আকিকা দেয়ার দায়িত্ব পিতার। পিতার সামর্থ্য না থাকলে মা দিবে। তা না হলে দাদা ,দাদি ,নানা ,নানী আকিকা দিতে পারবে। 

সামর্থ না থাকলে আকিকা না করলে কোনো গুনাহ হবে না। আকিকা দিলে সওয়াব হবে আর না দিলে গুনাহ হবে না।  যখন সামর্থ হবে তখনি আকিকা দেয়া যাবে। নিজের আকিকা নিজের ও করা যাবে।

অনেক শিশু জিন্মের সময় মারা যায় ,আবার মৃত সন্তান হয় এদের আকিকা করতে হবে না। 

হজরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত , হজরত মুহাম্মদ (সা) নবুওয়াত লাভের  পরে নিজের আকিকা নিজে করেছিলেন। (বায়হাকী) সঠিক নিয়মে আকিকা দেয়া হয় নবজাতক সন্তানের বলা মুছিবত দূর করার জন্য এবং আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায়ের জন্য। 

জাফর আল -সাদিকের একটি হাদিস অনুসারে ,প্রত্যেক শিশুর জন্য আকিকা করা বাধ্যতামূলক ,যদি তারা সন্তানের জন্য আকিকা না করে তবে তা মৃত্যু বা এই ধরনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। 

জন্মের কত তম দিনে আকিকা দেয়ার নিয়ম 

নবজাতক সন্তান জন্মের ৭ম দিনে আকিকা করা উত্তম। ৭ম দিনে আকিকা দিতে না পারলে ১৪তম দিনে আকিকা করা যাবে ,সম্ভব না হলে ২১তম দিনে আকিকা করা যাবে। তখন ও  সম্ভব না হলে যেকোনো দিন আকিকা দেয়া যাবে।

৭ম দিনে আকিকা করে উত্তম। ৭ম দিনে আকিকা করে নবজাতকের মাথা মুণ্ডন  করে ,নাম রাখতে হয়। ৭ম দিনে আকিকা দিতে না পারলে ও  নবজাতকের মাথা মুণ্ডন করতে হবে এবং নাম রাখতে হবে। 

মাথা মুণ্ডন করে চুলের ওজন পরিমান সোনা বা রুপা দান  করতে হবে। নামকরন  করার পরে যদি পরবর্তিতে নাম পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় তাহলে শুধু নাম পরিবর্তন করলেই হবে। নতুন করে আকিকা দেয়ার প্রয়োজন নেই। 

হজরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা) হতে বর্ণিত ,হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,প্রত্যেক শিশু তার আকিকার বিনিময়ের বন্ধনস্বরূপ। কাজেই সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে জবাই করে এবং মাথা মুন্ডন করে নাম রাখবে। (সুনানে আবু দাউদ : ২/৩৯২)

নবজাতক  সন্তানের নাম অবশ্যই ইসলামিক নাম রাখতে হবে। সন্তানের জন্য সুন্দর নাম রাখার গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হলো ,হাশরের ময়দানে সব ব্যক্তির নাম এবং বাবার নামসহ ডাকা হবে। তাই অর্থসহ সুন্দর ইসলামিক নাম রাখা জরুরি। 

অনেক জায়গায় কুসংস্কার আছে যে ,যখন শিশুর মাথা মুণ্ডানোর জন্য ক্ষুর বসানো হবে তখন পশু জবাই করা হবে। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আগে মাথা মুণ্ডানো যাবে আবার চাইলে আগে পশুও জবাই করা যাবে। 

ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক ,যেসব মাসআলা দিন ,তারিখ ,মাস,বছরের সাথে সম্পৃক্ত ,সেসবের হিসাব চাঁদের হিসাবে গণনা করতে হয়। চাঁদের হিসাব অনুযায়ী সূর্যাস্তের পর থেকে দিন তারিখ গণনা করা হয়। চাঁদের হিসাব অনুযায়ী ৭ম দিনে  আকিকা করা উত্তম।  

আকিকার পশুর সংখ্যা ও ধরণ 

ছেলে সন্তানের জন্য দুই টি ছাগল এবং মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল আকিকা করা সুন্নত। 

সামর্থ না থাকে একটি ছাগল দিয়েও আকিকা করা যায়। হজরত আলী (রা) বলেন ,হজরত মুহাম্মদ (সা) একটি ছাগল দিয়ে হাসানের আকিকা দিলেন। 

আকিকা কুরবানীর পশুর সঙ্গেও করা বৈধ আছে। কোরবানির পশুর ন্যায় একই পশুতে একাধিক ব্যক্তি শরিক হয়ে আকিকা দিতে পারবে। বড় পশু হলে ছেলের জন্য এক শরিক আকিকা দিলেও হয়ে। 

আকিকা গরু ,ছাগল, ভেড়া ,মহিষ ,উট,দুম্বা দিয়েও করা যাবে। কুরবানীর পশুর নিয়মেই আকিকার পশু হতে হবে ,যে সব পশু দিয়ে কুরবানী জায়েজ সেসব পশু দিয়ে আকীকাও জায়েজ। পশুটি অবশ্যই  সুস্থ সবল হতে হবে। 

আকিকার গোশত বন্টনের নিয়ম 

কুরবানীর গোশতের মতোই আকিকার গোশত বন্টনের নিয়ম। কুরবানীর মতোই আকিকার গোশত তিন ভাগে ভাগ করতে হবে।

এক ভাগ আত্নীয় -স্বজনদের ,একভাগ গরিব মিসকিনদের আর একভাগ নিজেদের। এভাবে ভাগ করা সুন্নত। আকিকার গোশত কাঁচা ও রান্না দুই ভাবেই বন্টন করতে পারবে। 

আকিকার গোশত সবাই খেতে পারবে। দাদা ,দাদি ,নানা, নানী ,বাবা ,মা সহ  সবাই খেতে পারবে। আকিকার গোশত কাঁচা বন্টন করতে হলে  গরুর কিংবা বড় পশুর হলে ৫০০ গ্রাম আর ছাগল হলে ২৫০ গ্রাম করে দিতে হবে। এমন ভাবে দিতে হবে যাতে এক জন ব্যক্তি একবার ভালোভাবে খেতে পারে।

আকিকার দোয়া বাংলা উচ্চারণ 

আল্লাহুম্মা হাযিহী আকিকাতু ইবনী ফুলানিন দামুহাবিদামিহী ওয়া লাহমুহা বিলাহমিহী ওয়া আজমুহা বিআযমিহী ওয়া জিলদুহা বিজিলদিহী ওয়া শা”রুহা বিশার”রিহী আল্লাহুম্মাজআলহা ফিদাআল্লি ইবনী মিনান্নার।

এরপর পড়বে ইন্নিওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি অল আরদা মিল্লাতা ইবরাহিমা হানীফাও অমা আনা মিনাল মুশরিকীন । ইন্না সলাতি ওয়া নুসুকি অমাহ ইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন ।

লাশারিকালাহু ওয়াবিজালিকা ওমিরতু অ আনা আওয়ালুল মুসলিমীন ।আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা বিছমিল্লাহি আল্লহুআকবার ।এই দোয়া বলে জবেহ করতে হবে  ।

জবেহকারী যদি সন্তানের পিতা না হয় তাহলে ইবনী এরস্থলে বাচ্চা ও তার পিতার নাম বলবে মেয়ে হলে বিনতী বলবে এবং দামুহু ‘ লাহমুহু ‘আজমুহু ‘জিলদুহু ‘শারুহু ‘পড়তে হবে।

আকিকার উপকারিতা 

আকিকার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। সন্তান সকল  বিপদ -আপদ ,বালা -মুছিবত হতে মুক্ত থাকে। আকিকার মাধ্যমে কিয়ামতের দিন পিতা সন্তানের সুপারিশের উপযুক্ত হয়। আকিকার মাধ্যমে গরিব -মিসকিন এবং আত্মীয় স্বজনদের হোক আদায় হয়। 

Sharing Is Caring:

Leave a Comment

Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

We have detected that you are using extensions to block ads. Please support us by disabling these ads blocker.

Powered By
Best Wordpress Adblock Detecting Plugin | CHP Adblock

সকল প্রকার ইসলামিক
বই । Video | Mp3