আকাশ মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের সকল সৃষ্টির মধ্যে এক অনন্য নিদর্শন। মহান আল্লাহ তায়ালা আকাশকে ৭ টি স্তরে সৃষ্টি করেছেন। আমরা কেবল একটি আকাশ দেখতে পাই। এটি ছাড়াও আরো ৬ টি আকাশ রয়েছে , যা আমরা দেখতে পাই না। আকাশের দরজা গুলো কখন ও আকাশের দরজা কেন খুলে দেয়া হয়
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এই সাত টি আকাশের অসংখ্য দরজা স্থাপন করেছেন। যেগুলো মুমিন বান্দার নেক আমল দ্বারা আরো দিন ও রাতের বিশেষ বিশেষ কাজে বিশেষ বিশেষ সময়ে আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়।
তবে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের হুকুমে আসমানের সবগুলো দরজা এক সাথে খুলে দেয়া হবে। আকাশের দরজা সমূহের প্রশস্ততা সম্পর্কে আমাদের কারো কোনো ধর্ণা নেই। একমাত্র মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন ভাল জানেন।
তবে পশ্চিম দিকে আকাশের প্রশস্ততা সম্পর্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,-. ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তওবাহ কবুলের জন্য পশ্চিম দিকে একটি দরজা খুলে রেখেছেন, যার প্রশস্ততা সত্তর বছরের পথ। সূর্য পশ্চিম দিকে উদয় না হওয়া পর্যন্ত এ দরজা বন্ধ করা হবে না’।
মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদাত বন্দেগী ও তার সকল আদেশ নিষেধ মেনে চলার জন্য। একজন বান্ডা মহান রব্বুল আলামিনের নিকট যেকোনো সময়ে যেকোনো কিছু চাইতে পারে।
এমন কিছু আমল আছে যা কোনো ব্যক্তি পাঠ করলে মহান আল্লাহ তায়ালা কবুল করার জন্য আসমানের সাত টি দরজা খুলে দেয়। ওই ব্যক্তির দোয়া তাড়াতাড়ি কবুল হয়। আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।
আকাশের দরজা কি কি কারণে এবং কোন সময় খুলে দেয়া হয় সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। আশা করি এখন থেকে আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
আকাশের দরজা খুলে দেয়ার কারণ
বিভিন্ন কারণে আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়। কিছু কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১। ফেরেশতা অবতরণের জন্য
আকাশের দরজা খুলে দেয়ার অন্যতম কারণ হলো ফেরেশতা অবতরণের জন্য। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের নির্দেশে ফেরেশতারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে পৃথিবীর জমিনে নেমে আসে। তাদের অবতরণ করার জন্য আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়।
২। বৃষ্টি পাতের জন্য
বৃষ্টি বর্ষণের জন্য মহান আল্লাহ আকাশের দরজা খুলে দেন। বৃষ্টির পানি হলো মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের বিশেষ রহমতের পানি। বৃষ্টির পানির মাধ্যমে মহান আল্লাহর সৃষ্টি অপরূপ সুন্দর পৃথিবী আরো সুন্দর হয়ে ওঠে।
কারণ এই বৃষ্টির পানির মাধ্যমে গাছপালা আরো সতেজ ও সুন্দর হয় এবং ফসলাদি জন্মে। যখন নূহ (আঃ) আল্লাহর কাছে তাঁর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দো‘আ করেছিলেন, তখন আল্লাহ আসমানের দরজা খুলে দিয়ে বৃষ্টি বর্ষণ করে নূহ (আঃ)-এর কওমকে মহাপ্লাবনে নিমজ্জিত করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন ,‘তখন সে তার প্রতিপালককে আহবান করে বলল যে, আমি অক্ষম। অতএব তুমি (ওদের থেকে) প্রতিশোধ নাও। অতঃপর আমরা আকাশের দরজাসমূহ খুলে দিলাম মুষলধারে বৃষ্টিসহ। (সূরা ক্বামার ,আয়াত নং : ১০ – ১১)
৩। তওবা কবুলের জন্য
মানুষ যখন পাপ কাজ করার পরে অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে ,তখন মহান আল্লাহ ওই বান্দার দোয়া কবুলের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেন। মহান আল্লাহ তায়ালা তার পাপী বান্দার তওবা কবুলের জন্য আকাশের পশ্চিম দিকে একটি দরজা সব সময় খুলে রেখেছেন।
৪। মুমিন বান্দার নেক আমল গ্রহণ করার জন্য
মুমিন বান্দা যখন অত্যন্ত বিনীতভাবে মহান আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার ইবাদাত বন্দেগী করে তখন মহান আল্লাহ তায়ালা আকাশের দরজা খুলে দেন।
যে সময় আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়
১। সূর্য হেলে যাওয়ার পরে
সূর্য হেলে যাওয়ার পরে ,জোহরের নামাজ আদায় করার আগে আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়। (তিরমিযী ,হাদিস নং: ৪৪০)
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,হজরত মুহাম্মদ (সা) দুপুরে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার পর যোহরের ফরয ছালাতের পূর্বে নিয়মিত চার রাক‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করতেন।
তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন,এটা এমন একটা সময় যখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, আর এই সময়ে আমার একটি নেক আমল উত্থিত হোক তা আমি ভালবাসি।
২। নামাজে একটি বিশেষ বাক্য বলার সময়
মুমিন বান্দা তাকবীরে তাহরীমা পাঠের মাধ্যমে ছালাত শুরু করে। তাকবীরে তাহরীমার পরে পঠিতব্য প্রায় ১২টি দো‘আর ব্যাপারে হাদীছে বর্ণনা এসেছে। তন্মধ্যে কতিপয় একটি দো‘আ রয়েছে, যা পাঠ করলে আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়।
এই দোয়াটি রুকুতে ,সিজদায় ,ছানা পড়ার আগে ও পরে পরে নিতে পারেন। দোয়াটি হলো:
আরবি উচ্চারণ
اللهُ أَكْبَرُ كَبِيْرًا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيْرًا، وَسُبْحَانَ اللهِ بُكْرَةً وَأَصِيْلًا.
বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু আকবার কবিরা আলহামদুলিল্লাহ কাসীরা ওসুবহানাল্লাহি বুখরাতাও ও আসিলা
অর্থ :
আল্লাহ সর্ব মহান ,সর্বশ্রেষ্ঠ ,সর্ব প্রশংসার অধিকার আল্লাহর জন্য। আল্লাহর গুন্ বর্ণনা সকাল ও সন্ধ্যা।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে , আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার (রাঃ) বলেন, ‘আমরা একদা আল্লাহর রাসূলের সাথে ছালাত আদায় করছিলাম। হঠাৎ কওমের এক ব্যক্তি তাকবীরে তাহরীমার পর উক্ত দোয়াটি বলে উঠল,রাসূল (ছাঃ) ছালাত শেষ করে জিজ্ঞেস করলেন, এই কথাগুলো কে বলল? সবার মধ্য থেকে জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা )! আমি বলেছি।
তখন তিনি বললেন, ‘কথাগুলো আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। কারণ কথাগুলোর জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছিল’।বার জন ফেরেশতা এর ছওয়াব আগে ভাগে আকাশে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করছিল
৩। কালিমা তায়্যিবাহ পাঠ করলে
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ এখলাসের সাথে পাঠ করা মাত্রই আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। (তিরমিযী ,হাদিস নং: ৩৫১৪)
৪। মাজলুমের দোয়া
নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের ব্যথিত হৃদয় থেকে উৎসারিত দো‘আ আল্লাহ সাথে সাথে কবুল করে নেন। কোন প্রতিবন্ধতা এই দো‘আ কবুলকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। মাযলূমের দো‘আ এতই গুরুত্ববহ যে, এটা আল্লাহর কাছে পৌঁছার জন্য আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়
হজরত মুহাম্মদ (সা) মু’আয বিন জাবাল (রা) কে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন , ‘তুমি মাযলূমের বদ দো‘আ থেকে বেঁচে থাক। কেননা সেই বদ দো‘আ ও আল্লাহর মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকে না’।এমনকি সেই বদ দো‘আ কোন কাফের অথবা পাপী লোকের পক্ষ থেকে হলেও আল্লাহ তা সাথে সাথে কবুল করে নেন।(তিরমিযী ,হাদিস নং : ২৪৪৯)
৫। নামাজের জন্য অপেক্ষা করা
এক ফরজ নামাজ আদায় করার পরে অন্য ফরজ নামাজ আদায়ের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকার সময় মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন আসমানের দরজা খুলে দেন।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে মাগরিবের নামাজ পড়লাম। তারপর যার চলে যাওয়ার চলে গেল এবং যার থেকে যাওয়ার থেকে গেল। রাসুলুল্লাহ (সা.) এত দ্রুতবেগে এলেন যে তাঁর দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হতে লাগল।
তিনি তাঁর দুই হাঁটুর ওপর ভর করে বসে বলেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমাদের প্রতিপালক আসমানের একটি দরজা খুলে দিয়েছেন এবং ফেরেশতাদের কাছে তোমাদের সম্পর্কে গর্ব করে বলছেন—তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা এক ফরজ আদায়ের পর পরবর্তী ফরজ আদায়ের অপেক্ষা করছে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮০১)
৬। আজান দেয়ার সময়
আজান দেয়ার সময় আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয় কারণ যাতে বান্দার দোয়া আল্লাহর আরশে তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারে।
আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়ের দো‘আ আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না। আবু উমামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (সা ) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন আযান দেওয়া হয়, তখন আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দো‘আ কবুল করা হয়’।
৭। মানুষের প্রয়োজন পুরুন
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে দুনিয়ার কোনো বিপদ থেকে রক্ষা করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো গরিব লোকের সঙ্গে (পাওনা আদায়ে) নম্র ব্যবহার করবে, আল্লাহ তার সঙ্গে দুনিয়া ও আখিরাতে নম্র ব্যবহার করবেন।
যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন করে রাখবে, আল্লাহও তার দোষত্রুটি দুনিয়া ও আখিরাতে গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করে, আল্লাহও ততক্ষণ তাঁর বান্দার সাহায্য করেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৬)
যে ব্যক্তি মানুষকে সাহায্য করে না তার ব্যাপারে হজরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন ,বিপরীতে যে মানুষকে সাহায্য করে তার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘গরিব-মিসকিন ও অভাবী মানুষকে প্রতিহত করতে যে নেতা নিজের দরজাকে বন্ধ করে রাখে, তার দারিদ্র্য, অভাব ও প্রয়োজনের সময় আল্লাহ তাআলাও আকাশের দরজা বন্ধ করে রাখবেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৩৩২)
৮। নামাজে সারিবদ্ধ হওয়ার সময়
যখন মানুষ ছালাতের জন্য কাতারবদ্ধ হয় এবং জিহাদের জন্য সারিবদ্ধ হয়ে দাড়াঁয়, তখন আকাশের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সাহাল বিন সাদ আস-সায়িদি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুটি সময় আসমানের দুয়ারগুলো খোলা হয়। তখন সাধারণত দোয়াকারীর দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। নামাজের সময় হলে এবং জিহাদের জন্য কাতারবদ্ধ হলে।’ (সহিহ আল-জামি, হাদিস : ৩৫৮৭)
৯। সন্তানের জন্য মা বাবার দোয়া
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয় : মাজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া ও সন্তানের জন্য পিতার দোয়া।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮৬২)
১০। রমজান মাসে
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন রমজান মাস আসে আসমানের দুয়ারগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দুয়ারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শিকলবদ্ধ করা হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৯৯)
১১। রাতের শেষ প্রহরের দোয়া
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে আমাদের প্রতিপালক পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন—কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব; কে আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করব; কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৪৫)
১২। সোমবার ও বৃহস্পতিবার
সোমবার ও বৃহস্পতিবার এই দুই দিন আকাশের দরজা এবং জান্নাতের ফটক সমূহ খুলে দেওয়া হয়। দয়াময় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থী বান্দার পাপ মোচন করে দেন এবং তার সাপ্তাহিক নেক আমল কবুল করেন।
১৩। মৃত্যুর পরে মুমিন ব্যক্তির আত্মা উপরে উঠানোর সময়
মুমিন বান্দার জান কবয করার পর তার আত্মার সৌরভে আকাশ-বাতাশ সুরভিত হয়ে যায় এবং আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়। তার মৃত্যুতে আরশের নিকটতম ফেরেশতারা খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়।
খন্দকের যুদ্ধে সা‘দ বিন মু‘আয (রাঃ) শাহাদত বরণের পর তাকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন,এই সেই ব্যক্তি, যার মৃত্যুতে আরশ কেঁপে উঠেছিল এবং আকাশের দরজাগুলো খুুলে দেওয়া হয়েছিল। আর তার জানাযায় অংশগ্রহণ করেছিলেন সত্তর হাযার ফেরেশতা। অথচ তার কবর সংকীর্ণ হয়েছিল। অতঃপর (রাসূল (ছাঃ)-এর দো‘আর বদৌলতে) পরে তা প্রশস্ত করে দেওয়া হয়েছিল।
১৪। আল্লাহর কিতাব পাঠের সময়
বান্দা যখন আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে কুরআন তেলাওয়াত করে তখন ফেরেশতারা আকাশের দরজা খুলে যমীনে অবতরণ করে ঐ বান্দাদেরকে ঘিরে রাখেন এবং আকাশের উন্মোচিত দরজা দিয়ে তাদের উপর রহমত ও প্রশান্তি বর্ষিত হতে থাকে।
হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ,একদা উসাইদ বিন হুযায়ের (রাঃ) রাতে তার বাড়ীতে বসে সূরা বাক্বারাহ তেলাওয়াত করছিলেন। হঠাৎ তার পাশে বেঁধে রাখা ঘোড়াটি লাফাতে শুরু করে। তিনি যখন কুরআন তেলাওয়াত বন্ধ করলেন, তখন ঘোড়াটি শান্ত হ’ল।
পুনরায় যখন তেলাওয়াত শুরু করলেন, ঘোড়াটিও লাফাতে শুরু করে দিল। আর ঘোড়াটির পাশে তার শিশু পুত্র ইয়াহইয়া শুয়েছিল। তিনি ভয় পেয়ে গেলেন, না জানি ছেলের গায়ে আঘাত লেগে যায়। তখন তিনি পুত্রকে টেনে আনলেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখতে পেলেন।
অতঃপর পরের দিন সকালে তিনি হজরত মুহাম্মদ (সা) এর নিকটে উপস্থিত হয়ে রাতের ঘটনাটি জানালেন। হজরত মুহাম্মদ (সা) বললেন, হে ইবনু হুযায়ের! তুমি পড়তেই থাকতে! হে ইবনু হুযায়ের! তুমি পড়তেই থাকতে! তখন সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ছেলেকে ঘোড়ার পায়ের আঘাত লাগার ভয়ে আমি তেলাওয়াত বন্ধ করেছিলাম।
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে ছায়ার মত এক জ্যোতির্ময় জিনিস দেখতে পেয়েছিলাম এবং তা দেখতে দেখতে উপরের দিকে উঠে শূন্যে মিলিয়ে গেল। তখন হজরত মুহাম্মদ (সা) বললেন, ‘তুমি কি জান, সেটা কি ছিল? তাঁরা ছিল ফেরেশতা। তোমার তেলাওয়াত শুনে তোমার কাছে এসেছিল। যদি তুমি তেলাওয়াত করতেই থাকতে, তাহ’লে তাঁরা সকাল পর্যন্ত এভাবেই থাকত এবং লোকেরা তাদেরকে দেখতে পেত। একজন ফেরেশতাও তাদের দৃষ্টির অন্তরাল হ’তেন না’।